ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে পুজো থেকে শুরু করে নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠানে ধূপকাঠি অবশ্য প্রয়োজনীয় একটি বস্তু। বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানের সময় ধূপকাঠির চাহিদা রীতিমতো শীর্ষে থাকে। আর সমগ্র ভারতে ধূপকাঠির এই বাড়তে থাকা চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এখন আপনিও নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
কিভাবে ধূপকাঠির ব্যবসা শুরু করবেন?
ধূপকাঠির ব্যবসা শুরু করার মূলত দুটি উপায় রয়েছে, আর এই দুটি উপায় হল- কাঁচামাল কিনে নিজে ধূপকাঠি তৈরি করা এবং পাইকারি মার্কেট থেকে ধূপকাঠি কিনে এনে বিক্রি করা।
১. নিজে ধূপকাঠি তৈরি করার মাধ্যমে ধূপকাঠির ব্যবসা:- আপনি যদি নিজে ধূপকাঠি তৈরির ব্যবসা শুরু করতে চান তবে ধূপকাঠি উৎপাদনের জন্য আপনাকে একটি জায়গা নির্বাচন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ধূপকাঠি তৈরি করার জন্য নূন্যতম ১০০০ স্কোয়ার ফিটের ঘর প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনার বাড়িতেই যদি ১০০০ স্কোয়ার ফিট জায়গা থেকে থাকে তবে আপনি নিজের বাড়িতেই ধূপকাঠি তৈরি করে নিতে পারবেন। অন্যদিকে আপনার বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না থাকে তবে আপনার লোকাল মার্কেটে একটি ঘর ভাড়া নিয়েও আপনি ধূপকাঠি তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। বাড়িতে ধূপকাঠি তৈরীর ক্ষেত্রে যে সমস্ত মেশিন এবং কাঁচামাল প্রয়োজন হয়ে থাকে তা আপনি আপনার বাড়ির নিকটবর্তী লোকাল মার্কেটে অথবা আপনার জেলার যেকোনো নামকরা মার্কেটে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমেও আপনি এই সমস্ত দ্রব্যগুলি পেয়ে যাবেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, নিজের হাতে ধূপকাঠি তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষভাবে ধূপকাঠি তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে হবে, নতুবা আপনার কোম্পানির ধূপকাঠি বাজারের অন্যান্য ধূপকাঠির সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে না। নিজে ধূপকাঠি তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে আরও যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে তা হল, বর্তমানে সুগন্ধিত ধূপকাঠির চাহিদা যথেষ্ট বেশি, সুতরাং মার্কেটে জায়গা তৈরি করার জন্য আপনিও নানা ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে ধূপকাঠি তৈরি করতে পারেন। এর পাশাপাশি ধূপকাঠির প্যাকেজিং যেন যথেষ্ট ভালো হয় সে বিষয়টিতে নজর দেবেন, নতুবা আপনার গ্রাহকরা ধূপকাঠি কিনতে চাইবেন না। এছাড়াও আপনার এলাকার দোকানগুলিতে কোন ধরনের ধূপকাঠির চাহিদা যথেষ্ট বেশি তা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমেও আপনি ধূপকাঠি উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা পেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার এলাকার দোকানগুলিতে তাদের চাহিদা অনুসারে ধূপকাঠি সরবরাহের মাধ্যমে আপনি ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
২. পাইকারি মার্কেট থেকে ধূপকাঠি কিনে নিজস্ব ব্যবসা তৈরি:- আপনি যদি ধূপকাঠি তৈরির ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পেতে চান, তবে আপনি পাইকারি মার্কেট থেকে ধূপকাঠি কিনে নিজের এলাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরা দরে ধূপকাঠি বিক্রির মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবসা তৈরি করতে পারবেন। এইভাবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই আপনার এলাকার দোকানগুলিতে কোন কোন ধরনের ধূপকাঠির চাহিদা যথেষ্ট বেশি তা সম্পর্কে জানতে হবে। এরপর আপনার জেলার যেকোনো একটি নামজাদা মার্কেট থেকে পাইকারি দরে ধূপকাঠি কিনে এনে এই সমস্ত দোকানগুলির চাহিদা অনুসারে বিক্রি করার মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। এইভাবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে আলাদা করে দোকান নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই আপনার বাড়ির যেকোনো ঘরকে আপনি ধূপকাঠির স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার করে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে আপনার বাড়িতে যদি যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা না থাকে তবে লোকাল মার্কেটে যেকোনো দোকান কিংবা গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে ধূপকাঠি স্টোর করার মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- বিয়েতে প্রবাসীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যয় কমান।
নিজে ধূপকাঠি তৈরি করার ক্ষেত্রে কোন কোন মেশিন প্রয়োজন হয়ে থাকে?
আপনি যদি কাঁচামালের মাধ্যমে নিজের বাড়িতে ধূপকাঠি তৈরি করতে চান তবে আপনাকে ধূপকাঠি তৈরির পাউডার মেশানোর মেশিন, ধূপকাঠি শুকানোর মেশিন এবং ধূপকাঠি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন কিনতে হবে। এছাড়াও ধূপকাঠি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নানা ধরনের উপাদান, প্যাকেজিং -এর উপাদান এবং সুগন্ধিও কিনতে হবে।
ধূপকাঠির ব্যবসায় প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ:-
আপনি যদি কাঁচামাল কিনে নিজে ধূপকাঠি তৈরি করতে চান তবে আপনাকে যথেষ্ট টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ধূপকাঠি তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নানা ধরনের মেশিন থেকে শুরু করে ধূপকাঠি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান কেনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং এইভাবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে অন্ততপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে আপনি যদি পাইকারি মার্কেট থেকে ধূপকাঠি কিনে এনে নিজের এলাকায় সাপ্লাইয়ার হিসেবে বিক্রি করতে চান তবে আপনাকে যথেষ্ট কম টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কত পরিমাণ ধূপকাঠি কিনছেন তার উপরে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করবে। এইভাবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে।
ধূপকাঠির ব্যবসা থেকে লাভের পরিমাণ:-
আপনি যদি কাঁচামাল কিনে এনে নিজস্ব ধূপকাঠির ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার লাভের সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি। গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে ধূপকাঠি তৈরির মাধ্যমে মার্কেটে আপনার ধূপকাঠির ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আপনি প্রত্যেক মাসে ৫০০০০ টাকা থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন। অন্যদিকে আপনি যদি পাইকারি মার্কেট থেকে ধূপকাঠি কিনে এনে বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে চান, তবে আপনার লাভের পরিমাণ নির্ভর করবে গ্রাহকের চাহিদার উপরে। এক্ষেত্রেও আপনি প্রত্যেক মাসে ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন।