বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণ যে টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্মুখীন হয়েছেন তাতে সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরির তুলনায় ভারতের যুবসমাজ ব্যবসার ক্ষেত্রে আরও বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে যেকোনো ধরনের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মূল যে প্রশ্নটি রয়ে যায় তা হল, কোন ব্যবসা শুরু করলে অত্যন্ত সহজেই বেশি পরিমাণে লাভ করা যাবে কিংবা বারো মাস কোন ব্যবসার চাহিদা থাকবে। আর এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় যে, মুদিখানার ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যার চাহিদা সব সময়ই রয়েছে। আজ্ঞে হ্যাঁ, এখন আপনি মুদিখানার ব্যবসা শুরু করে প্রতিমাসে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় নজরে রাখা প্রয়োজন। এই সমস্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানলে ব্যবসায়ীকে লাভের বদলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। আর তাই আজকের এই বিশেষ পোস্টে আমরা মুদিখানার ব্যবসা সম্পর্কিত সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
মুদিখানার ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কি রকম জায়গা প্রয়োজন হবে?
মুদিখানার ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই এমন একটি জায়গা নির্বাচন করে নিতে হবে যেখানে প্রত্যেকদিন প্রচুর লোকসমাগম হয়। এর জন্য আপনি আপনার বাড়ির নিকটবর্তী মার্কেটে ঘর ভাড়া নিতে পারেন, এছাড়াও সবজি বাজার, মাছ বাজার, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, যেকোনো হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টের নিকটবর্তী জায়গাগুলিতেও আপনি আপনার দোকানটি খুলতে পারেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নানাবিধ প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় কোনো মুদিখানার দোকান থাকে না, আপনি এরকম একটি জায়গা বেছে নিয়েও নিজের ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। তবে আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি কোন মুদিখানা দোকান না থাকে এবং আপনার বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা থাকে তবে আপনি নিজের বাড়িতেই মুদিখানা দোকান তৈরি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিজের বাড়িতে মুদিখানা দোকান তৈরির ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখবেন তা হল, আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি যথেষ্ট লোকসমাগম হয়ে থাকে কিংবা অনেকটা অঞ্চলজুড়ে কোন মুদিখানা দোকান না থেকে থাকে তবেই আপনি নিজস্ব দোকানটি তৈরি করবেন, নতুবা লোকাল মার্কেটে যেকোনো পছন্দসই জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান তৈরি করতে পারেন।
মুদিখানার ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন হয়ে থাকে?
মুদিখানার ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে একটি পাকাপোক্ত ঘরের পাশাপাশি মুদিখানার নানা ধরনের জিনিস সাজিয়ে রাখার জন্য তাক, কাঁচের শোকেস, কাঠের শোকেস, দাঁড়িপাল্লা, লাইট, পাখা প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মনিটরের ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়াও আপনার দোকানে আপনাকে বিভিন্ন কোম্পানির চাল, ডাল, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, বিভিন্ন কোম্পানির গরম মসলা সহ প্রতিদিনের রান্নার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস, তেল, লবণ, চিনি, সুজি, নুডুলস, আচার, তাল মিছরি, কর্ণ ফ্লাওয়ার, বেকিং সোডা, বেকিং পাউডার, ব্রেড, বিস্কুট, কেক, চানাচুর, জ্যাম, জেলি, মধু, সস, চুইংগাম, শ্যাম্পু, সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট পাউডার, ব্রাশ, মাউথ ওয়াশ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, হেয়ার রিমুভাল, শেভিং ক্রিম, স্কিন ক্রিম, স্কিন পাউডার, লোশন সহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য গুলি রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি কোন জিনিসটি কি পরিমানে কিনবেন তা আপনার বিনিয়োগের অর্থের উপর নির্ভর করছে। সুতরাং আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি না হলে সমস্ত জিনিসগুলি অল্প পরিমাণে কিনুন। এর পরে জিনিসের চাহিদা অনুসারে একটি তালিকা তৈরি করুন এবং যে জিনিসগুলোর চাহিদা অত্যন্ত বেশি সেই জিনিসগুলি বেশি পরিমাণে আনুন বাকিগুলি অল্প পরিমাণে স্টকে রাখুন।
মুদিখানার ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে?
প্রথমেই আপনাকে আপনার পছন্দসই জায়গায় একটি যথেষ্ট জায়গা সম্পন্ন ঘর তৈরি করে নিতে হবে। এরপর কার্ড এবং কাচের শোকেস, তাক, লাইট এবং পোস্টারের মাধ্যমে আপনাকে আপনার দোকানকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে আপনি আপনার দোকানে যে সমস্ত জিনিসগুলি রাখতে চাইছেন সেই সমস্ত জিনিসগুলি বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুসারে সাজিয়ে রাখুন। এরপর একটি শুভ দিন বেছে নিয়ে নিজের দোকানের উদ্বোধন করুন এবং দোকান উদ্বোধনের দিনে গ্রাহকদের জন্য নির্দিষ্ট ছাড় কিংবা অফারের ব্যবস্থা করুন যাতে গ্রাহকরা আপনার দোকানে আকর্ষিত হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন হোডিং এবং পোস্টারের মাধ্যমে আপনি আপনার দোকানের প্রচার করতে পারবেন, যা গ্রাহকদের আপনার দোকানের প্রতি আকর্ষণ করবে। মুদিখানার ব্যবসার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল, লাভের মার্জিন কম রেখে গ্রাহককে খানিকটা বেশি ছাড়ে জিনিস বিক্রি করুন, তাহলেই আপনার দোকানে অধিক পরিমাণে গ্রাহক আসবে। এছাড়াও আপনার দোকানে যে সমস্ত জিনিসগুলি উপলব্ধ রয়েছে সেগুলির নাম এবং দাম সহ একটি মেনু কার্ড রেডি রাখতে পারেন এতে গ্রাহকের সুবিধা হবে। এর পাশাপাশি ব্যবসাটিকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য আপনাকে আপনার দোকানে অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তবে যদি মনে হয় একা কোনমতে দোকান চালানো সম্ভব হচ্ছে না তবে আপনি আপনার পরিবারের যেকোনো সদস্য কিংবা বন্ধু বান্ধবের সাহায্যে নিতে পারেন, তবে প্রয়োজন হলে আপনি বেতনভোগী কর্মচারীও রাখতে পারেন।
হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা:-
বর্তমান বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে হোম ডেলিভারিও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সুতরাং আপনিও আপনার দোকানটিকে এই সমস্ত অনলাইন সাইটে রেজিস্টার্ড করাতে পারেন। এতে গ্রাহকরা বাড়িতে বসেই আপনার দোকান থেকে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
লাইসেন্স:-
মুদিখানা দোকান শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে হবে। এছাড়াও খাদ্যপণ্য বিক্রি করার জন্য আপনাকে ফুড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে হবে।
মুদি দোকানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং লাভ:-
নিজস্ব মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার ১ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনি কি পরিমাণ জিনিস কিনছেন এবং দোকান তৈরি করার জন্য কত টাকা খরচ করছেন তার উপরে। অন্যদিকে বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে একটি মুদিখানা দোকান থেকে প্রত্যেক মাসে ন্যূনতম ১২% থেকে ২০% লাভ হয়ে থাকে। সুতরাং আপনার মুদিখানা দোকানটি থেকে আপনি প্রত্যেক মাসে অন্ততপক্ষে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ তুলে নিতে পারবেন।