জৈষ্ঠ্য মাস পড়তে না পড়তেই গ্রীষ্মের দাবদাহে রীতিমতো পুড়ছে বাংলা। তাপ প্রবাহের জেরে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। আর এমতাবস্থায় জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে যে সমস্ত মানুষ প্রতিদিন বাইরে যাচ্ছেন তাদের অবস্থা আরো সংকটজনক হয়ে উঠছে। চূড়ান্ত গরমে গ্রীষ্মের তাপ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ বেছে নিয়েছে নানা ধরনের কোল্ড ড্রিংসকে। তবে শুধুমাত্র কোল্ড্রিংস নয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে কাটা ফল এবং ফলের রসের বিক্রিও। আপনিও যদি এই গ্রীষ্মের মরশুমে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চান তবে ফলের রসের ব্যবসা আপনার জন্য একেবারে পারফেক্ট হতে চলেছে।
ফলের জুসের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন হয়ে থাকে:-
ফলের জুসের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার আম, লিচু, মৌসম্বি, আঙ্গুর, তরমুজের মতো নানা ধরনের মৌসুমী ফল প্রয়োজন হবে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন হবে নানা ধরনের ড্রাই ফ্রুটস এবং বরফ। তবে এই সমস্ত উপাদানের মাধ্যমে জুস তৈরি করার জন্য আপনার আরো কিছু যন্ত্রপাতি এবং বিশেষ কিছু উপাদান প্রয়োজন হতে চলেছে, সেগুলি হল, ফ্রিজ, ছুরি, চপিং বোর্ড, মিক্সার কিংবা জুস তৈরির মেশিন। গ্রাহকদের অত্যন্ত দ্রুততার সাথে জুস সার্ভ করার জন্য এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য অন্ততপক্ষে দুটি অথবা তিনটি মিক্সার কিংবা জুস তৈরির মেশিন কিনতে হবে। তবে আপনি নিজের মূলধনের পরিমাণ অনুসারে সেকেন্ড হ্যান্ড মিক্সার মেশিন অথবা জুস তৈরির মেশিন কিনে নিতে পারেন। অন্যদিকে আপনার দোকানটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য বেশ কিছু শো কেস প্রয়োজন হবে। এছাড়াও কাস্টমারদের ফ্রেশ জুস সার্ভ করার জন্য গ্লাস প্রয়োজন হতে চলেছে। জুস তৈরি ক্ষেত্রে সমস্ত রকম হাইজিন বজায় রাখার জন্য আপনার একটি বড় সাদা চশমা এবং কিছু গ্লাভস প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে জুসের ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার যে সমস্ত দ্রব্যগুলি প্রয়োজন হতে চলেছে তা আপনি আপনার এলাকার যেকোনো বড় মার্কেটে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও আপনি এই সমস্ত দ্রব্যগুলি অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট এর মত অনলাইন শপিং অ্যাপগুলিতেও পেয়ে যাবেন।
দোকানের জন্য জায়গা নির্বাচন:-
এই গরমে ঠান্ডা ফ্রুট জুসের চাহিদা যথেষ্ট বেশি। সুতরাং আপনি আপনার এলাকার লোকাল মার্কেটে কিংবা স্টেশন অথবা বাসস্ট্যান্ডের নিকটবর্তী অঞ্চলে নিজের দোকানটি তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার এলাকার যেকোনো ভিড়যুক্ত অঞ্চলে কিংবা স্কুলের আশেপাশে অথবা হাসপাতালের আশেপাশে বা জিমের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নিজের দোকানটি তৈরি করতে পারেন। তবে আপনার বাড়ির নিকটবর্তী অঞ্চলে যদি যথেষ্ট লোকসমাগম হয়ে থাকে তবে আপনি আপনার বাড়িতেই নিজের দোকানটি তৈরি করতে পারবেন। যদিও অনেকেই এখন ফুড ভ্যানের মাধ্যমেও জুস বিক্রি করে থাকেন। সুতরাং আপনি চাইলে ফুড ভ্যান -এর মাধ্যমেও আপনার এলাকার বিভিন্ন জনবহুল অঞ্চলগুলিতে ফ্রুট জুস বিক্রি করতে পারবেন।
কিভাবে এই ব্যবসাটি শুরু করবেন?
ফ্রুট জুসের ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনাকে নিজের পছন্দসই এলাকায় আপনার দোকানটি নির্বাচন করে নিতে হবে। এরপর আপনাকে আপনার দোকানের সঙ্গে মানান সই একটি নাম ঠিক করতে হবে। ইনডোর প্লান্টস, লাইট -এর মাধ্যমে আপনার দোকানটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে হবে। আপনার অঞ্চলের যথেষ্ট ভিড়যুক্ত এলাকাগুলিতে পোস্টার ও হোডিং -এর মাধ্যমে আপনার দোকানটি সম্পর্কে যথেষ্টভাবে প্রচার করার মধ্যে দিয়ে আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এছাড়াও দোকানের উদ্বোধনের সময় নানা ধরনের অফার, ভাউচার, স্কিম লঞ্চ করার মধ্যে দিয়ে গ্রাহকদের আপনার দোকানের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার দোকানের শো কেস গুলিতে নানা ধরনের প্যাকেট বন্দি ফল ও জুস সাজিয়ে রাখতে পারেন, এগুলি গ্রাহককে আপনার দোকানে আসতে আরও বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট করবে। তবে জুস তৈরির ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যথেষ্ট পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে তবেই জুস তৈরি করবেন এবং ফলের জুস তৈরির ক্ষেত্রে নানা ধরনের ভ্যারাইটি আনার চেষ্টা করবেন, তবেই গ্রাহকরা অন্য যেকোনো দোকানের বদলে আপনার দোকানটিকে বেছে নেবেন।
এর পাশাপাশি গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে লস্যি থেকে শুরু করে নানা ধরনের শরবতও আপনার দোকানের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এছাড়াও আপনার দোকানে যে সমস্ত ফ্রুট জুসগুলি তৈরি করবেন সেগুলির একটি ক্যাটালগ তৈরি করতে পারেন, এই ক্যাটালগ -এর মাধ্যমে গ্রাহক নিজের পছন্দমত ফ্রুট জুস বেছে নেওয়ার সুবিধা পাবেন। যদিও এই ব্যবসাটিতে আলাদা করে কোন কর্মচারীর প্রয়োজন হয় না, তবে একইসাথে জুস তৈরি এবং গ্রাহকদের জুস বিতরণ করার ক্ষেত্রে যদি সমস্যা হয়, তবে আপনি আপনার পরিবারের যেকোনো সদস্য কিংবা বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন, এমনকি নিজের সুবিধা অনুসারে একজন কর্মচারীও রাখতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনার ব্যবসাটি বড় হতে শুরু করলে আপনি আপনার দোকানে কতগুলি চেয়ার, টেবিল সেট করে ক্যাফের মত করে দোকানটিকে সাজাতে পারেন। এতে যেমন গ্রাহকরা বসে জুস অর্ডার করতে পারবেন, অন্যদিকে আপনিও ফ্রুট জুসের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
ফ্রুট জুসের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স:-
যেকোনো ধরনের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই ট্রেড লাইসেন্স -এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং ফ্রুট জুসের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেও আপনার ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কার্যকরী শিল্প সাথী পোর্টাল থেকে বাড়িতে বসেই আপনি আপনার ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। এছাড়াও, আপনার ব্যবসাটিকে SSI ইউনিটের অন্তর্গত রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি FSSAI থেকে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে।
ফ্রুট জুসের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কত টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়ে থাকে?
ফুট জুসের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ৫০০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়ে থাকে। অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় যথেষ্ট কম টাকা বিনিয়োগ করে আপনি ফ্রুট জুসের ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
লাভ:-
আপনি যদি নিজের ব্যবসার সঠিকভাবে প্রচার করতে পারেন এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে জুস সার্ভ করতে পারেন তবে আপনি আপনার এই ব্যবসাটি থেকে প্রত্যেক মাসে অন্ততপক্ষে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পেয়ে যেতে পারবেন। এমনকি ব্যবসাটিকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারলে প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারেন। অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালেই ফ্রুট জুসের চাহিদা যথেষ্ট বেশি। এক্ষেত্রে বলতে হয় যে, ভারতে অধিকাংশ সময়টাই যথেষ্ট গরম থাকে। এছাড়াও শুধুমাত্র গরমকালে ফ্রুট জুসের চাহিদা থাকে এমনটা নয়, অন্যান্য সময়েও ফ্রুট জুসের যথেষ্ট চাহিদা থাকে। বাইরে বেরোলেই অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ফলের রসকেই বেছে নেয়। সুতরাং এই ব্যবসা থেকে লোকশানের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।