বর্তমান সময় বিয়ের ডেকোরেশন হোক বা জন্মদিনের উপহার অথবা অন্নপ্রাশন, পূজা কিংবা বিবাহ বার্ষিকী সমস্ত ক্ষেত্রেই ডেকোরেশন থেকে শুরু করে উপহারের জন্য ফুল প্রয়োজন হয়ে থাকে। সমগ্র ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের নানাবিধ দেবদেবীর পূজা থেকে শুরু করে উপরোক্ত সমস্ত ধরনের অনুষ্ঠানে নানা ধরনের ফুল অবশ্য প্রয়োজনীয়। যার কারণে সমগ্র দেশজুড়ে প্রতিনিয়ত ফুলের চাহিদা ক্রমাগত হারে বাড়ছে। আর সারা ভারতব্যাপী ফুলের বাড়িতে থাকা চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এখন আপনি নিজের নতুন ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, এখন আপনি নিজস্ব ফুলের ব্যবসা শুরু করে প্রত্যেক মাসে যথেষ্ট ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন। তবে ফুলের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, নতুবা ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যার জেরে আজকের এই পোস্টে আমরা ফুলের ব্যবসা এবং ফুলের ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
মূলত দুইভাবে একটি নিজস্ব ফুলের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। ফুলের ব্যবসা শুরু করার এই দুটি উপায় হল: নিজস্ব দোকান শুরু করার মাধ্যমে ফুলের ব্যবসা এবং বিভিন্ন ফুলের দোকান সহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানে প্রয়োজন অনুসারে ফুল সরবরাহ করার মাধ্যমে ফুলের ব্যবসা।
১. নিজস্ব দোকান শুরু করার মাধ্যমে ফুলের ব্যবসা:- বিবাহ, জন্মদিন, পূজা, বিবাহ বার্ষিকী, জন্মদিন থেকে শুরু করে যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠানে ফুলের মালা, ফুলের তোড়া এমনকি ফুলের গয়না পর্যন্ত প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং আপনি চাইলেই নিজস্ব ফুলের দোকান খুলে ফুলের তোড়া, ফুলের গয়না, ফুলের মালা তৈরি করার মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। তবে নিজস্ব ফুলের দোকান তৈরি করার জন্য আপনাকে ফুলের মালা, ফুলের তোড়া, গয়না, রাখি এই সমস্ত জিনিসগুলি তৈরি করা শিখতে হবে। একবার এই সমস্ত জিনিসগুলি তৈরি করা শিখে গেলে আপনি আপনার এলাকার যেকোনো জনবহুল জায়গায় নিজের দোকান তৈরি করার মাধ্যমে নিজস্ব ফুলের ব্যবসা তৈরি করতে পারবেন।
নিজস্ব দোকান তৈরি করার ক্ষেত্রে, আপনি যে জায়গাটিতে নিজের দোকান তৈরি করছেন সেখানে যেন কোন ফুলের দোকান না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিন। দোকান তৈরি পাশাপাশি আপনার এলাকায় কোথায় কোথায় ফুল বিক্রি করা হয় তা সম্পর্কেও খোঁজ নিতে হবে। এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলেই আপনি নিজস্ব ফুলের দোকানের মাধ্যমে ফুলের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ফুলের কোয়ালিটির দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে, এতে গ্রাহকের কাছে আপনার দোকানের কদর বাড়বে। মনে রাখবেন ফুলের তোড়ায় বাসি ফুল থাকলে গ্রাহকের মনে আপনার দোকান সম্পর্কে খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হবে। এর পাশাপাশি আপনি ফুলের মাধ্যমে নানা ধরনের ইউনিক ডিজাইনের আকর্ষণীয় ফুলের তোড়া তৈরি করতে পারেন। এতে গ্রাহক যেমন আপনার দোকানের দিকে আকৃষ্ট হবে ঠিক তেমনভাবেই আপনার দোকানের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়বে।
আরও পড়ুন:- আগামী মাসের শুরুতে আরো এক সপ্তাহের ছুটি পেতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীরা।
২. প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন দোকানে এবং অনুষ্ঠানে ফুল সরবরাহ করার মাধ্যমে ফুলের ব্যবসা:- এই পদ্ধতিতে নিজস্ব ফুলের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই চিনে নিতে হবে আপনার এলাকায় কোথায় সব থেকে কম দামে ভালো মানের ফুল পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি সরাসরি চাষিদের সাথে যোগাযোগ করে ফুল সংগ্রহ করতে পারেন। এরপর আপনাকে আপনার নিকটবর্তী এলাকার ফুলের দোকানগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেখানে প্রতিদিন কোন ফুল কি পরিমানে প্রয়োজন হয়ে থাকে তা সম্পর্কে জানতে হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা গেলে আপনি যে কোন পাইকারি মার্কেট থেকে কিংবা সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ফুল কিনে আপনার এলাকার লোকাল মার্কেটের ফুলের দোকানগুলিতে পাইকারি দরে বিক্রি করার মাধ্যমে নিজস্ব ফুলের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি যে ফুলগুলো দোকানে সরবরাহ করছেন সেগুলি যেন তাজা এবং ভালো গুণমানের হয় তার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি ফুলের প্যাকেজিং -এর দিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। ফুল সরবরাহ করার সময় আপনাকে ভালোভাবে প্যাকেজিং করতে হবে। এছাড়াও প্যাকেজিং করার সময় যাতে অযথা কোন ফুল ছিঁড়ে না যায় কিম্বা চাপে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
এছাড়াও দোকানে ফুল সরবরাহের মাধ্যমে ফুলের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সপ্তাহের কোন বারে কোন ফুলের চাহিদা অধিক থাকে সেই বিষয়টিও আপনাকে নজরে রাখতে হবে। মূলত সমগ্র ভারত জুড়ে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে নানাবিধ দেবতার পূজো করা হয়ে থাকে, আর এই সমস্ত দেবতার পূজোতে বিভিন্ন প্রকার ফুল প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং সপ্তাহের কোন দিনে কোন ফুল প্রয়োজন হয়ে থাকে তা বিশেষভাবে নজরে রাখার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসার উন্নতি করতে পারবেন। এছাড়াও চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন প্রকার মরশুমী ফুল সরবরাহ করার মাধ্যমে আপনি নিজস্ব ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র আপনার এলাকার ফুলের দোকানগুলিতেই নয়, আপনার এলাকায় নানাবিধ বিয়ে বাড়ি, বিবাহ বার্ষিকী, অন্নপ্রাশন জন্মদিন থেকে শুরু করে যেকোনো অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ফুল সরবরাহ করেও আপনি আপনার ফুলের ব্যবসাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
ফুলের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ:-
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, নিজস্ব ফুলের দোকান তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনার ১৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনি নিজস্ব দোকান তৈরি করছেন কিনা, আপনি কত পরিমাণে ফুল কিনছেন কিংবা কোথা থেকে ফুল কিনছেন, এই সমস্ত বিষয়গুলির উপরে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করবে। অন্যদিকে আপনি যদি ফুলের হোলসেলার হিসেবে ব্যবসা শুরু করতে চান কিম্বা ফুল বিক্রি করার মাধ্যমে নিজস্ব ফুলের ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু এক্ষেত্রে গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে আপনাকে ফুল সরবরাহ করতে হবে, সুতরাং ফুলের পরিমাণের ওপর আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে।
লাভের পরিমাণ:-
ফুলের ব্যবসা থেকে আপনি প্রত্যেক মাসে ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করে নিতে পারবেন। ফুলের ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যার চাহিদা সারা বছর থাকে। সুতরাং ফুলের ব্যবসা নিয়ে লোকসানের কোন চিন্তা নেই। আপনি যদি সঠিকভাবে ব্যবসাটিকে পরিচালনা করতে পারেন, তবে প্রত্যেক মাসে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন, এমনকি ফুলের ব্যবসার মাধ্যমে এর থেকে বেশি অংকের টাকাও উপার্জন করা সম্ভব।