অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ যুবক-যুবতী বর্তমানে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর তাতেই ভারতীয় যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন প্রকার নিত্যনতুন ব্যবসা শুরু করে চলেছে। তবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সবথেকে প্রয়োজনীয় যে বিষয়টি তা হল, আপনি যে ব্যবসাটি শুরু করতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য ভালোভাবে জেনে নেওয়া। সমস্ত তথ্য ভালোভাবে না জানা থাকলে ব্যবসা দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে আপনাকে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এমনকি ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্স থেকে শুরু করে অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়াগুলি না জানলে আপনাকে বিভিন্ন প্রকার আইনি জটিলতার মুখেও পড়তে হবে। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা এমন এক বিশেষ ব্যবসা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি যার মাধ্যমে আপনার বাড়িতে বসেই যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
বাড়িতে বসে টি-শার্টের ব্যবসা:-
আজকে আমরা যে ব্যবসাটির ব্যাপারে আলোচনা করতে চলেছি তা হল টি-শার্টের ব্যবসা। বর্তমান সময় নরমাল টি-শার্ট হোক বা ওভার সাইজ টি-শার্ট দুটিই ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। ছেলে হোক বা মেয়ে উভয়ের পোশাকেই বর্তমানে টি-শার্ট যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর টি-শার্টের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আপনি নিজের নতুন ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
টি-শার্টের ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে?
টি-শার্টের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার কাছে ৩ টি পদ্ধতি রয়েছে আর তা হল টি-শার্টের পাইকার হিসেবে ব্যবসা করা, নিজের টি-শার্ট -এর দোকান শুরু করা এবং অনলাইনে মাধ্যমে টি-শার্ট -এর ব্যবসা শুরু করা।
১. প্রথমে আসা যাক টি-শার্টের পাইকার হিসেবে আপনি কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন তার কথায়। পাইকার হিসেবে ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনি আপনার নিকটবর্তী পাইকারি মার্কেট থেকে অথবা আপনার জেলার যথেষ্ট নামকরা মার্কেট থেকে টি-শার্ট কিনে এনে আপনার এলাকার বিভিন্ন দোকানগুলিতে পাইকার হিসেবে ডেলিভারি করতে পারেন এবং তা থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে তা হল, আপনি পাইকারি মার্কেট থেকে যে টি-শার্টগুলি আনবেন তার কাপড়ের কোয়ালিটি এবং প্রিন্ট উভয়ই যেন ভালো হয়, নতুবা আপনি গ্রাহক ধরে রাখতে পারবেন না। এছাড়াও আপনি নিজে বাড়িতে বসে প্রিন্টের টি-শার্ট তৈরি করে সেগুলিকে আপনার নিকটবর্তী দোকানগুলিতে পাইকারি দরে বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সলিড কালারের টি-শার্ট পাইকারি মার্কেট থেকে কিনে আনতে হবে এবং নিজের বাড়িতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে টি-শার্ট প্রিন্ট করে পরবর্তীতে সেগুলি লোকাল মার্কেটে পাইকারি দরে বিক্রি করতে হবে।
২. নিজস্ব টি-শার্টের দোকান শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে একটি এমন জায়গায় বেছে নিতে হবে যেখানে রোজ প্রচুর পরিমাণ লোকের আনাগোনা হয়ে থাকে। এরপর আপনার দোকানটিকে লাইট, হোডিং, ব্যানারের সাহায্যে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে হবে এবং আপনার দোকানের শো-কেসে নানা ধরনের টি-শার্ট সাজিয়ে রাখতে হবে, এতে গ্রাহক আপনার দোকানের প্রতি আকৃষ্ট হবেন। এছাড়াও আপনার নিকটবর্তী এলাকায় মাইকিং কিংবা ব্যানার টাঙানোর মাধ্যমেও আপনি আপনার ব্যবসাটির প্রচার শুরু করতে পারবেন। নিজের দোকান শুরু করার ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটবর্তী পাইকারি মার্কেট থেকে যথেষ্ট ভালো মানের টি-শার্ট কিনে এনে আপনার দোকান থেকে বিক্রি করতে পারবেন। অন্যদিকে আপনি চাইলেই বাড়িতে কিংবা দোকানে যন্ত্রের মাধ্যমে টি- শার্ট প্রিন্ট করে নিজের দোকানের মাধ্যমে তা বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল, আপনি নানা ধরনের ট্রেন্ডিং ডায়লগ, ক্যালিগ্রাফি এবং টাইপোগ্রাফির মাধ্যমে টি -শার্ট প্রিন্ট করবেন, এগুলি যুবক-যুবতীদের আকর্ষণ করবে এবং আপনার দোকানে ভিড় বাড়বে।
৩. উপরোক্ত দুটি পদ্ধতি ছাড়াও আপনি অনলাইনের মাধ্যমেও নিজস্ব টি-শার্টের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে Flipkart, Amazon, Myntra, Meesho -এর মত বিভিন্ন অনলাইন শপিং অ্যাপ থেকে শুরু করে facebook, whatsapp, instagram -এর মত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলি সাহায্য নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি লোকাল মার্কেট থেকে পাইকারি দরে টি-শার্ট কিনে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন অথবা নিজে বাড়িতে বসে টি-শার্ট প্রিন্ট করার মাধ্যমেও এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিস বেছে নিতে হবে, যারা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ কিংবা সমগ্র ভারতে টি-শার্টগুলি সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে দিতে পারবে।
আরও পড়ুন:- মাদ্রাসা টেট নিয়ে জোড়া রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিস্তারিত জেনে নিন।
টি শার্ট প্রিন্টিং এর ক্ষেত্রে কি প্রয়োজন হয়ে থাকে?
প্রিন্টেড টি-শার্ট -এর ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্যাফ্লোন শিট, সাবলিমেশন মেশিন, সাবলিমেশন টেপ, সাবলিমেশন প্রিন্টার, কালি, রং, কোনরকম ডিজাইন ছাড়াই বিভিন্ন রংয়ের টি-শার্ট প্রয়োজন হবে।
টি-শার্টের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কত টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন?
আপনি যদি যেকোনো মার্কেট থেকে পাইকারি দরে টি-শার্ট কিনে নিয়ে সেগুলির ব্যবসা করতে চান তবে আপনাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তবে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনি কত পরিমাণ টি-শার্ট কিনছেন তার ওপরে। তবে আপনি যদি নিজস্ব প্রিন্টেড টি-শার্টের ব্যবসা শুরু করতে চান তবে ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে আপনি যদি নিজস্ব দোকান করতে চান তবে দোকানের ভাড়া অথবা নির্মাণের খরচ সহ আরও ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ দোকান তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
লাভের পরিমাণ:-
বিভিন্ন সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে দেখা গিয়েছে যে, যুবক-যুবতীদের মধ্যে ক্রমাগত হারে টি-শার্টের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং আপনি যদি ঠিকঠাক মতো আপনার ব্যবসাটিকে চালাতে পারেন তবে প্রথমেই এই ব্যবসা থেকে প্রত্যেক মাসে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা উঠে আসবে। এরপর ব্যবসা সঠিকভাবে চলতে শুরু করলে এই ব্যবসা থেকে আপনি প্রত্যেক মাসে অন্ততপক্ষে ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।