সদ্য বাংলা নববর্ষ শুরু হয়েছে। আর এই নতুন বছরের একেবারে শুরুতেই চাঁদিফাটা গরমে বাঙালির প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আর এই গরম থেকে বাঁচতে আইসক্রিম থেকে শুরু করে কোল্ড ড্রিংকসের চাহিদা একেবারে তুঙ্গে। আর এই গ্রীষ্মের মরশুমে ৮ থেকে ৮০ সকলের পছন্দের তালিকায় আইসক্রিম থাকবেই থাকবে। তবে শুধুমাত্র গ্রীষ্মের মরশুমে আইসক্রিমের চাহিদা থাকে এমন বলাটা ভুল হবে। বর্তমানে সারা বছরই কমবেশি আইসক্রিমের চাহিদা থাকে। আর আইসক্রিমের বাড়তে থাকা চাহিদাকে কাজে লাগিয়েই আপনি নিজস্ব আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইসক্রিমের ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য না জানতে পারার কারণে এই ব্যবসায় আগ্রহী থাকলেও নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন না নাগরিকরা। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের এই সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছি।
আইসক্রিমের ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য জানার আগে সর্বপ্রথম আইসক্রিম তৈরি করতে কি কি জিনিস প্রয়োজন হয়ে থাকে এবং তা কোথায় পাওয়া যাবে তা জানা প্রয়োজন। চলুন তবে প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক
আইসক্রিম বানানো ক্ষেত্রে কি কি কাঁচামাল প্রয়োজন হয়ে থাকে:-
গমের আটা, ভুট্টা, বিভিন্ন ধরনের ফুড কালার, ক্রিম, দুধ, বেকিং পাউডার, চিনি, এরারুট পাউডার, লিকুইড ফ্লেভার মিল্ক পাউডারের মত জিনিসগুলি প্রয়োজন হবে। এছাড়াও কিসমিস, পেস্তা, কাজুবাদাম -এর মতো দ্রব্যগুলি প্রয়োজন হয়ে থাকে। আইসক্রিম বানানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এই সকল জিনিসগুলি আপনি আপনার বাড়ির নিকটবর্তী লোকাল মার্কেটে পেয়ে যেতে পারেন। তবে লোকাল মার্কেটে যদি সমস্ত উপাদানগুলি না পাওয়া যায় তবে আপনি অ্যামাজন এবং ইন্ডিয়া মার্ট -এর মত অ্যাপের মাধ্যমেও বাড়িতে বসে এই সমস্ত উপাদানগুলি পেয়ে যেতে পারবেন। তবে আপনি আপনার বাড়ির নিকটবর্তী যেকোন বড় মার্কেট অথবা আপনার এলাকার যেকোন নামকরা মার্কেট থেকে এই সমস্ত উপাদানগুলি পাইকারি দরে পেয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি যে, শুধুমাত্র আইসক্রিমের মেশিন কিনলেই হবে না। আইসক্রিম বানানোর জন্য ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নতুবা আইসক্রিমের গুণমান ভালো রাখা সম্ভব হবে না।
আইসক্রিম তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেশিন:-
আপনি যদি যথেষ্ট বিনিয়োগ সহকারে আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করতে চান তবে সফট মেশিন, মোটা শেক মেশিন, স্লুশি মেশিন, পোর্টেবল টাইপ ফ্রিজার, আইসক্রিমের কোন তৈরির মেশিন প্রয়োজন হবে। এই সমস্ত মেশিনগুলি আপনি আপনার এলাকার যেকোনো নাম করা মার্কেট থেকে কিনে নিতে পারবেন অথবা বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমেও বাড়িতে বসে কিনে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল, কি হতে চলেছে আগামী দিনে? নতুন আপডেট জেনে নিন
ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জায়গা:-
আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট মেশিন প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং সমস্ত মেশিন বসিয়ে আইসক্রিম তৈরি করতে পারবেন এইরকম জায়গা আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন হবে। আপনি যদি নিজস্ব দোকান তৈরি করে ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার বাড়ির নিকটবর্তী যে জায়গাগুলিতে সব থেকে বেশি লোকসমাগম হয় তার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি নির্বাচন করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিজস্ব দোকান তৈরির জন্য স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড -এর নিকটবর্তী জায়গা, লোকাল মার্কেটের মত জায়গাগুলি একেবারে পারফেক্ট হবে। তবে আপনার বাড়ির আশেপাশের এলাকায় যদি যথেষ্ট লোকসমাগম হয়ে থাকে তবে আপনি আপনার বাড়িতেও আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
ব্যবসার পদ্ধতি:-
আপনি আইসক্রিমের ব্যবসাটিকে দুই ভাবে শুরু করতে পারবেন। প্রথমত আপনি আপনার লোকাল মার্কেটের সমস্ত দোকানগুলিতে পাইকার হিসেবে আইসক্রিম বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও নিজের দোকান অথবা আইসক্রিম পার্লার তৈরি করে আপনি আইসক্রিম বিক্রি করতে পারেন। পাইকার হিসেবে ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনি আপনার বাড়িতেই আইসক্রিম তৈরি করে আপনার লোকাল মার্কেটে দোকানগুলিতে সরবরাহ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার আইসক্রিমের প্যাকেজিং এবং কোয়ালিটির ওপর জোর দিতে হবে তবে বাজারের অন্যান্য নামিদামি ব্রান্ডের আইসক্রিমের মধ্যেও আপনার আইসক্রিম গ্রাহকদের মনে জায়গা করে নিতে পারবেন। এছাড়াও আপনি নিজের বাড়িতে অথবা আপনার নির্বাচিত জায়গায় দোকান কিংবা আইসক্রিম পার্লার তৈরি করে নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন তা হল, আইসক্রিমের দোকান কিংবা পার্লার শুরু করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের আইসক্রিম তৈরি করতে হবে। এর পাশাপাশি আইসক্রিমগুলি স্বাদ ও গন্ধে যথেষ্ট আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখবেন আপনার দোকান থেকে গ্রাহক যেন কোনভাবেই ফিরে না যায়। তবে শুরুতেই আপনার ব্যবসার প্রচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের অফার চালু করতে পারেন। এছাড়াও হোডিং এবং মাইকিং -এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসার প্রচার করতে পারেন। তবে এখানেই শেষ নয়, বিয়ে বাড়ি, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে আইসক্রিম সরবরাহ করার অর্ডার নেওয়ার মাধ্যমেও আপনি আপনার ব্যবসাটিকে বাড়াতে পারবেন। আপনার সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে বড় করে ব্যবসাটিকে শুরু করতে গেলে কিংবা আইসক্রিম পার্লার শুরু করতে চাইলে আপনাকে বেশ কিছু কর্মচারী নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার বন্ধুদের কিংবা পরিবারের সাহায্য নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের যোগান:-
আপনি যদি যথেষ্ট বড় করে আইসক্রিমের ব্যবসাটিকে শুরু করতে চান তবে আপনার ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হবে। তবে খানিকটা ছোট করে ব্যবসাটিকে শুরু করতে গেলে ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে। তবে বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী PMEGP অর্থাৎ প্রাইম মিনিস্টার এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রামের আওতায় ব্যবসা শুরু করার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে যেকোন ব্যবসার মূল বিনিয়োগের ৯০ শতাংশ টাকা ঋণ হিসেবে পাওয়া যায়। সুতরাং ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মূলধন নিয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই।
লাভ:-
বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, আইসক্রিমের ব্যবসায় প্রত্যেক মাসে নূন্যতম ২০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। ব্যবসার প্রথম দিকে ২০,০০০-৩০,০০০ টাকা লাভ করা সম্ভব হলেও আপনার ব্যবসা ধীরে ধীরে পরিচিতি পেতে শুরু করলে পরবর্তীতে প্রত্যেক মাসে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব হবে।
প্রয়োজনীয় লাইসেন্স:-
ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। এর পাশাপাশি আপনার ব্যবসাকে SSI ইউনিটের অন্তর্গত রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে এবং FSSAI থেকে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে।