সমগ্র দেশের সাধারণ জনগণের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার সহ বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকারের তরফে রেশন কার্ড ও রেশনের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে। মূলত দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী আর্থিকভাবে অসহায় শ্রেণীর সাধারণ জনগণকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে খাদ্যদ্রব্য প্রদানের লক্ষ্যেই রেশন ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র দরিদ্র, নিম্নবিত্ত নাগরিকরাই নয়, স্বল্প আয়কারী মধ্যবিত্ত সাধারণ জনগণও রেশন গ্রহণের সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাটি খানিকটা হলেও আলাদা। করোনা মহামারীর সময় থেকেই কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ই যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গের রেশন ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকেন। তবে এবারে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন এক বিশেষ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হলো যা শুনে সাধারণ মানুষের মাথায় রীতিমতো হাত পড়েছে। বিভিন্ন সূত্রের প্রকাশিত রিপোর্ট মারফত জানা গিয়েছে যে, আগামী দিনে প্রায় ২ কোটি রেশন গ্রাহক বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার অধিকার হারাবেন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, সমগ্র ভারতে যে রেশন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে তাতে যথেষ্ট অসচ্ছতা রয়েছে। যার জেরে এই রেশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার অসচ্ছতা দূর করতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর তাতেই সমগ্র ভারতের রেশন কার্ডধারী সাধারণ নাগরিকদের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকা মারফত আরও জানানো হয়েছে যে, সমগ্র ভারতের প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এই মানতে হবে। সুতরাং ভারতে বসবাসকারী কোনো নাগরিকই এই নিয়মের বাইরে নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রেশন কার্ডধারী প্রত্যেক নাগরিককেই আধার কার্ড ও রেশন কার্ড লিঙ্ক করতে হবে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যের দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী এই বিশেষ নির্দেশ ইতিমধ্যেই ফল প্রদান করা শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:- লক্ষ্মীর ভান্ডারের অধীনে মহিলাদের ১০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার জন্য দাবি তুললেন তৃণমূলের বিধায়ক।
সরকারি কর্মকর্তাদের তরফে জানানো হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই আধার কার্ড ও রেশন কার্ড লিঙ্ক করার মাধ্যমে বহু সংখ্যক ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যে সমস্ত নাগরিকদের রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে তারা আগামী দিনে আর কোনোভাবেই বিনামূল্যের খাদ্যশস্য পাবেন না, এমনটাই জানা গিয়েছে সরকারি ক্ষেত্রের রিপোর্টে। বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে আরো জানা গিয়েছে যে, বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে রেশন বিতরণ করার জন্য প্রত্যেক বছর রেশন খাতে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই সমস্ত ভুয়ো রেশন কার্ডের মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিরা বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে রেশন গ্রহণ করার ফলে রেশন খাতের খরচ ক্রমাগত হারে বাড়ছে। ফলত এই সমস্ত ভুয়ো রেশন কার্ডকে বাতিল করতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার সহ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার, যার জেরে কেবলমাত্র যোগ্য রেশন কার্ড ধারীদের চিহ্নিত করতেই আধার কার্ড ও রেশন কার্ড লিঙ্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এর ফলস্বরূপ, ইতিমধ্যেই রাজ্যব্যাপী ২ কোটি ভুয়ো রেশন গ্রাহককে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আগামী দিনে এই দুই কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল রূপে ঘোষণা করা হলে রেশন খাতের খরচ যথেষ্ট কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে অর্থনৈতিক মহলের ব্যক্তিত্বদের তরফ। এতদিন পর্যন্ত এই সকল অযোগ্য রেশন গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। রাজ্যব্যাপী এইরূপ ভুয়ো গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি, অন্যদিকে প্রত্যেক ভুয়ো গ্রাহকের জন্য রাজ্য সরকারকে প্রতি মাসে অন্ততপক্ষে ১৫০ টাকা খরচ করতে হয়। অর্থাৎ এই সকল ভুয়ো গ্রাহকের জন্য রাজ্য সরকারকে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। সুতরাং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গৃহীত এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী দিনে রেশন খাতে বরাদ্দ খরচ থেকে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, যা সাধারণ জনগণের উন্নতির খাতিরে ব্যবহার করা সম্ভব।