কলকাতা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে শহরের বুকে। এরকমই এক ঐতিহ্যপূর্ণ বস্তু হলো ট্রাম। প্রায় ১৫০ বছর ধরে কলকাতা শহরে পরিষেবা দিয়ে চলেছে ট্রাম। বলতে গেলে শহরবাসী নস্টালজিক হয়ে পড়ে ট্রামে চড়ে। কিন্তু এবার খুব শীঘ্রই বন্ধ হতে চলেছে ট্রাম পরিষেবা। রাজ্য সরকার ট্রাম পরিষেবা তুলে দিতে কোর্টে হাজির হয়েছে।
রাজ্য সরকার ট্রাম তুলে দেওয়ার পক্ষে। তাদের দাবী, ট্রাম লাইনের জন্য বারংবার দুর্ঘটনা চলতেই থাকছে। এগুলো বন্ধ করার জন্য তাই কোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য সরকার। অবশেষে মাত্র ১ টি রুটে ট্রাম চালানোর অনুমতি মিলেছে। এতদিন শহরে তিনটি রুটে ট্রাম চলাচল করতো (টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট-ধর্মতলা এবং ধর্মতলা-শ্যামবাজার)। আগামী সময়ে এটি কমে মাত্র ১টি রুটে চলতে থাকবে ট্রাম।
একটি রুটে ট্রাম চালানোর জন্য রাজ্যের পরিবহন দপ্তর কোর্টে আর্জি জানাতে চলেছে। জানা যাচ্ছে এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুরের মধ্যে যে লাইন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সেই রুটেই ট্রাম চলবে। এটিকে ‘জয় রাইড’ হিসেবে চালানো যেতে পারে। ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে বেশ মন খারাপ আমজনতার। কিন্তু মানুষের তুলনায় যানবাহন সংখ্যা বা রাস্তার সংখ্যা কম হওয়ার কারণে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করতে চাইছে পরিবহন দপ্তর।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা সমস্ত রুটে ট্রাম চালানোর পক্ষে। বিষয়টি সম্পর্কে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সাগ্নিক গুপ্ত বলেন, “পৃথিবীর বহু দেশে নতুন করে ট্রাম পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। কারণ, এত কম খরচে পরিবেশবান্ধব ও দূষণহীন যান মেলা সম্ভব নয়। অথচ আমাদের রাজ্য সরকার ট্রাম পরিষেবাটাই তুলে দিতে চাইছে। বলা হচ্ছে, মন্থর গতির ট্রাম শহরের ট্র্যাফিক জ্যামের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
সাগ্নিক আরো বলেন, “একটি ট্রামের দু’টি কামরা ১২০ জন মানুষকে পরিবহণ পরিষেবা দিতে পারে। অথচ সেই ট্রাম তুলে দিয়ে কুড়িটি অটো রাস্তায় নামিয়ে ১২০ জন মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। একটি ট্রাম রাস্তায় বেশি যানজট করে, না কি কুড়িটি অটো যানজট করে? এমন প্রশ্ন প্রশাসন না বুঝুক, কলকাতার বাসিন্দারা নিশ্চয়ই জানেন।” উল্লেখ্য যে, এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর ট্রাম পরিষেবা আম্ফানের সময় থেকে বন্ধ রয়েছে, পুনরায় সেই রাস্তায় ট্রাম চালাতে চলেছে সরকার।