ভারতীয় নাগরিকদের সুবিধার খাতিরে ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে, যেগুলির মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকরা প্রতিমাসে খুব অল্প পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমেও কয়েক বছরে যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করে নিতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হল ডাক বিভাগের অধীনস্থ সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করলে কোনোরকম ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে না। মূলত এই সমস্ত সঞ্চয় স্কিমগুলি কোনভাবেই শেয়ার বাজারের সাথে যুক্ত না হওয়ায় কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই এই সমস্ত স্কিমের অধীনে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। আর আজ আমরা পোস্ট অফিসের এমনই এক বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্প সম্পর্কে কথা বলতে চলেছি যার মাধ্যমে বিনিয়োগের সময়সীমা শেষে আপনি দ্বিগুণ অর্থ ফেরত পেয়ে যাবেন।
চলুন তবে পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী এই বিশেষ স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-
পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী এই বিশেষ স্কিমটি কিষাণ বিকাশ পত্র নামে সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত লাভ করেছে। ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফা জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকই এই স্কিমের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট কিংবা জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা সম্ভব। এমনকি যে সমস্ত পিতা-মাতা নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চান তাদের সুবিধার খাতিরে এই স্কিমের অধীনে ১০ বছরের বেশি বয়সী শিশুর অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শিশু প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টের সমস্ত দায়িত্ব তার পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবককে নিতে হবে।
এর পাশাপাশি ডাক বিভাগের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, মাত্র ১০০০ টাকার বিনিময়ে যেকোন ভারতীয় নাগরিক কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়নি, একজন নাগরিক তার সামর্থ্য অনুসারে ১০০ এর গুণিতকে যেকোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। যদিও এই স্কিমের অধীনে ৫০,০০০ টাকার তুলনায় বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হলে প্যান কার্ড সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য জমা করতে হবে। ইন্ডিয়ান পোস্টের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ২০২৩ সালের বাজেট অধিবেশনের পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে, এই স্কিমের আওতাধীন নাগরিকরা তাদের বিনিয়োগের আমানতের উপর ৭.৪ % হারে সুদ পেয়ে থাকেন। সুতরাং এবার থেকে এই স্কিমের আওতাধীন নাগরিকরা বিনিয়োগের উপরে আরো বেশি পরিমাণ সুদ পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন:- আধার কার্ডের QR কোডটি কোন কাজে লাগে, জেনে নিন এখনই।
এর পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে যে, কিষাণ বিকাশ পত্রের আওতাধীন কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে উক্ত ব্যক্তি এই স্কিমের আওতাধীন বিনিয়োগের টাকা দাবি করতে পারবেন, যদিও এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর শংসাপত্র এবং নমিনির আইডি পোস্ট অফিসে জমা করতে হবে। ডাক বিভাগের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, কিষাণ বিকাশ পত্রের আওতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে তার এলাকার নির্দিষ্ট পোস্ট অফিসে যেতে হবে এবং ডাক বিভাগের তরফে নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে। এরপর উক্ত ব্যক্তি যত টাকা বিনিয়োগ করতে চাইছেন তা নগদ অর্থরূপে কিংবা চেক অথবা ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে জমা করতে হবে। শুধু তাই নয়, এর সাথে ফর্মে উল্লিখিত নথিগুলিও অ্যাটাচ করে জমা করতে হবে, তাহলেই কিষাণ বিকাশ পত্রের শংসাপত্র পাওয়া যাবে।
কত সময়ে এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগকৃত টাকা দ্বিগুণ হবে?
ইতিপূর্বে কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে বিনিয়োগকৃত টাকা দ্বিগুণ হতে ১২০ মাস সময় প্রয়োজন হত। কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে সুদের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে বর্তমানে ১২০ মাসের বদলে ১১৫ মাস সময়ের মধ্যেই কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে বিনিয়োগকৃত টাকা দ্বিগুণ করা সম্ভব। সুতরাং আপনি যদি ১০ লক্ষ টাকা ১১৫ মাসের জন্য কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে বিনিয়োগ করেন তবে নির্ধারিত সময়সীমার পরে ২০ লক্ষ টাকা আপনার হাতে পেয়ে যাবেন।