ভারতের যুবক-যুবতীরা বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। তবে অধিকাংশ জনগণই শেয়ার বাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করতে চান না। বর্তমানে ভারতীয় জনগণ শেয়ার বাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো স্কিমগুলির বদলে এমন বেশ কিছু স্কিমকে বেছে নিয়েছেন যেগুলির মাধ্যমে তারা অত্যন্ত সহজেই সুদ সহ রিটার্ন ফেরত পাবেন এবং এই সকল স্কিমে ঝুঁকির কোনো আশঙ্কা থাকে না। আর তাতেই ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে কার্যকরী নানা ধরনের স্কিমগুলি ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় এই সমস্ত স্কিমগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি স্কিম হলো পোষ্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিম। পোস্ট অফিসের এই বিশেষ স্কিমটির মাধ্যমে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই গ্যারান্টি যুক্ত রিটার্ন পাওয়া যায়। এমনকি পোস্ট অফিসের এই স্কিমটির শেয়ার মার্কেটের সাথে কোনরকম যোগাযোগ না থাকায় এই স্কিমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিরও কোন চিন্তা থাকে না। আর আজ আমরা ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে কার্যকরী রেকারিং ডিপোজিট স্কিম সম্পর্কিত সকল প্রকার তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি, যাতে আপনারা প্রত্যেক মাসে ১০০ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন।
পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী এই স্কিমের আওতায় কারা বিনিয়োগ করতে পারবেন?
পোস্ট অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ভারতে বসবাসকারী যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই পোস্ট অফিসের রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজস্ব সিঙ্গেল একাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। অন্যদিকে জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমেও এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যক্তি জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। অন্যদিকে যে সমস্ত পিতা-মাতা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তারাও তাদের সন্তানের নামে এই স্কিমের আওতায় একাউন্ট খুলতে পারবেন। এক্ষেত্রে পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিমের আওতায় ১০ বছরের বেশি বয়সী শিশুর একাউন্ট খোলা সম্ভব। তবে এই একাউন্টের সমস্ত দায়িত্ব উক্ত শিশুর পিতা, মাতা কিংবা আইন সম্মত অভিভাবককে নিতে হবে।
ভারতীয় ডাক বিভাগের অফিসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানানো হয়েছে যে, নূন্যতম ১০০ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমেই যেকোনো ভারতীয় নাগরিক এই স্কিমের আওতায় নিজের নামে নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে এই স্কিমের আওতায় সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কোনরূপ ঊর্ধ্বসীমা নেই। পোস্ট অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ১০ টাকার গুণিতকে যেকোনো টাকার অংক এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সুতরাং আপনিও যদি আপনার কিম্বা আপনার পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে থাকেন, তবে প্রত্যেক মাসে এই স্কিমের আওতায় নূন্যতম ১০০ টাকা করে বিনিয়োগ করতে পারেন। নাগরিকদের সুবিধার্থে আরও জানিয়ে রাখি যে, পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিমের আওতাভুক্ত কোন ব্যক্তি যদি কোন মাসে নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা দিতে ভুলে যান তবে প্রতি ১০০ টাকায় তাকে ১ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি যদি পরপর ৪ মাস টাকা দিতে ভুলে যান তবে তার অ্যাকাউন্টটি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন:- ফুলের ব্যবসা শুরু করে প্রত্যেক মাসে ৬০০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করুন। বিস্তারিত জানুন।
পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে কত শতাংশ হার সুদ পাওয়া যাবে?
পোস্ট অফিসের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পোস্ট অফিস রেকর্ডিং ডিপোজিট স্কিমের অধীনে একজন ব্যক্তি ৬.২% হারে সুদ পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। পোস্ট অফিসের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, প্রত্যেক তিন মাস অন্তর অন্তর এই স্কিমের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনার টাকা অংক যতই স্বল্প হোক না কেন এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে চক্রবৃদ্ধি সুদের কারণে তা অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং স্কিমের মেয়াদ ফুরলে আপনি যথেষ্ট টাকা রিটার্ন পেয়ে যাবেন।
এই স্কিমের আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা আর কি কি সুবিধা পাবেন?
পোস্ট অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়েছে যে, এই স্কিমের আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা স্কিমে বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর লোন নেওয়ার সুবিধাও পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে স্কিমের মেয়াদ ফুরানোর আগে যদি সুবিধাভোগী ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে, তবে ওই ব্যক্তির আইনসম্মত উত্তরাধিকারী বা নমিনি এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগকৃত অর্থ দাবি করতে পারেন। এছাড়াও উক্ত ব্যক্তির আইনসম্মত উত্তরাধিকারী বা নমিনি পোস্ট অফিসের সম্মতিক্রমে এই স্কিমের মেয়াদ ফুরানো পর্যন্ত এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করে যেতে পারবেন।
এই স্কিমের মেয়াদ কত বছর?
ভারতীয় ডাক বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিমের আওতায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে ৫ বছরের মেয়াদ পূরণের পর ওই ব্যক্তি পুনরায় এই স্কিমের আওতায় আরো ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিমের সময়সীমা ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
কত টাকা বিনিয়োগ করলে কত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে?
পোস্ট অফিস রেকারিং ডিপোজিট স্কিমের আওতায় আপনি যদি প্রত্যেক মাসে ১০০০ টাকা করে বিনিয়োগ করেন তবে ৫ বছর পরে আপনি সুদ সহ ৭০,৪৩১ টাকা ফেরত পাবেন। আপনি যদি আরও ৫ বছরের জন্য এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করতে চান, তবে আপনি আপনি ১০ বছর পরে মোট ১.৬৬ লক্ষ টাকা ফেরত পাবেন। অন্যদিকে, আপনি যদি এই স্কিমের আওতায় প্রত্যেক মাসে ৫০০০ টাকা করে বিনিয়োগ করেন তবে ৫ বছরে আপনার বিনিয়োগের টাকা সুদ সহ ৩.৫২ লক্ষ টাকায় পৌঁছাবে। অ্যাকাউন্টের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানো হলে ১০ বছরে আপনি সুদ সহ মোট ৮.৩২ লক্ষ টাকা পেয়ে যাবেন। অন্যদিকে আপনি যদি এই স্কিমের আওতায় প্রত্যেক বছরে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তবে ৫ বছরের মেয়াদ ফুরোলে আপনি এই স্কিম থেকে ৭.০৪ লক্ষ্য ঢাকা ফেরত পাবেন, আর বিনিয়োগের সময়সীমা আরো ৫ বছর বাড়ানো হলে ১০ বছরে আপনি সুদ সহ মোট ১৬ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন।