২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে সমগ্র দেশব্যাপী ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করা হয়েছিল যা এক কথায় নোটবন্দি নামে সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণের কাছে পরিচিত। আর এই নোট বন্দির সময় যে সমস্ত ব্যক্তির কাছে অতিরিক্ত ক্যাশ টাকা ছিল তাদের যথেষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। আর তারপর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়িতে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাশ টাকা রাখার প্রবণতা যথেষ্ট কমেছে। যদিও বর্তমানে ফোন পে, গুগল পে, পেটিএম, অ্যামাজন পে -এর মত অ্যাপ এবং ইউপিআই -এর কারণে অধিকাংশ মানুষই ক্যাশ টাকায় লেনদেন করার বদলে ইউপিআই -এর মাধ্যমে টাকা লেনদেনের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায়শই সংবাদপত্রের পাতায় হিসাববিহীন ক্যাশ টাকা উদ্ধারের কাহিনী নজরে পড়ে। আর তাতেই বাড়িতে সর্বাধিক কত ক্যাশ টাকা রাখা সম্ভব এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ জনগণ জানতে আগ্রহী।
আপনি সর্বাধিক কত ক্যাশ আপনার বাড়িতে রাখতে পারবেন:-
অনেকেই মনে করেন বাড়িতে সর্বোচ্চ কত ক্যাশ রাখা যাবে তা সম্পর্কে আয়কর দপ্তরের তরফে নির্দিষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নাগরিকদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, একজন ব্যক্তি তার বাড়িতে সর্বাধিক কত টাকা ক্যাশ হিসেবে রাখতে পারবেন তার কোন উর্ধ্বসীমা আয়কর দপ্তরের তরফে নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থাৎ আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ৫০,০০০ টাকা, ১ লক্ষ টাকা এমনকি কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত নগদ অর্থ নিজের বাড়িতে রাখতে পারবেন। তবে কোন কারণে যদি আপনার বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালায় তবে আপনার বাড়িতে ঠিক যে পরিমাণ ক্যাশ টাকা রয়েছে তার আয়ের নির্দিষ্ট সোর্স সম্পর্কে সমস্ত সঠিক তথ্য ইডির আধিকারিকদের প্রদান করতে হবে। আর সেই সময় আপনি যদি আপনার আয়ের সঠিক উৎস সম্পর্কে কোন তথ্য প্রদান করতে না পারেন তবে আপনাকে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
আয়ের সঠিক উৎস সম্পর্কে জানানো না হলে কি হতে পারে?
আপনার বাড়িতে রাখা নগদ টাকার সঙ্গে যদি আপনার আয়ের নথির হিসেবে মিল না থাকে তবে আয়কর দপ্তরের নিয়ম অনুসারে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট টাকার জরিমানা দিতে হবে। এমনকি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকদের তরফে হিসাববিহীন সমস্ত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস -এর নিয়ম অনুসারে আপনার বাড়ি থেকে যে আমানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে তার ১৩৭ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে ইডি, সিবিআই -এর মত সংস্থাগুলি আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এমনকি আপনাকে জেল পর্যন্ত যেতে হতে পারে। তবে আপনার কাছে যদি আপনার আয়ের সমস্ত ডকুমেন্ট ঠিকঠাক থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আপনি আয়কর রিটার্ন দিয়ে থাকেন তবে এই বিষয়টি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনরূপ কারণ নেই।
আয়কর সংক্রান্ত যেকোনো রকম সমস্যা থেকে বাঁচতে কোন বিষয়গুলি মেনে চলা প্রয়োজন?
আয়কর দপ্তরের তরফে কার্যকরী নিয়ম অনুসারে ১ অর্থবর্ষে ২০ লক্ষ টাকার অংকের টাকা নগদে লেনদেন করা হলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা জরিমানা হিসেবে জমা করতে হবে। অন্যদিকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া বা তোলার ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার তুলনায় বেশি টাকা লেনদেন করা হলে প্যান নম্বর জমা দেওয়া আবশ্যক, নতুবা আপনি ৫০ হাজার টাকার থেকে বেশি টাকা লেনদেন করতে পারবেন না। এর পাশাপাশি আয়কর দপ্তরের তরফে কার্যকরী নিয়মে আরো বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি এক অর্থবর্ষে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার থেকে বেশি অংকের টাকা নগদ হিসেবে জমা করেন তবে উক্ত ব্যক্তিকে তার প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য জমা করতে হবে। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি যদি তার প্যান কার্ড ও আধার কার্ড সংক্রান্ত কোনো রূপ তথ্য জমা না দেন তবে তাকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো জিনিস কেনার জন্য ২ লক্ষ টাকা বা তার তুলনায় বেশি অর্থ নগদে জমা করেন তবে তাকে তার প্যান কার্ড এবং আধার কার্ডের একটি করে কপি জমা করতে হবে।
নগদ টাকায় অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকার বেশি অনুদান দেওয়া সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি আয়কর দপ্তরের তরফে আরো জানানো হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি অপর একজন ব্যক্তির থেকে নগদ টাকায় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকার বেশি ঋণ নিতে পারবেন না। এমনকি আপনি আপনার কোনো আত্মীয়ের থেকেও একদিনে ২ লক্ষ টাকার বেশি নগদ টাকা নিতে পারবেন না। আয়কর দপ্তরের তরফে কার্যকরী নিয়ম অনুসারে এরূপ যেকোনো ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে। অন্যদিকে আয়কর দপ্তরের তরফে জারি করা নিয়মে বলা হয়েছে যে, ৩০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি মূল্যের সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের তদন্তকারী সংস্থার নজরদারির আওতায় আনা হবে।
এক্ষেত্রে ইডি, সিবিআই -এর মত তদন্তকারী সংস্থার তরফে ৩০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি মূল্যের সম্প্রতি ক্রয় বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আয়ের উৎস সম্পর্কে তদন্ত করা হতে পারে। এর পাশাপাশি আয়কর দপ্তরের তরফে আরো জানানো হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি একেবারে ১ লক্ষ টাকা ক্রেডিট কার্ড কিংবা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে তবে ওই ব্যক্তিকেও তদন্তকারী সংস্থার নজরদারিতে রাখা হবে, এমনকি আয়কর দপ্তরের নির্দেশ অনুসারে উক্ত ব্যক্তির আয়ের উৎস সম্পর্কেও তদন্ত করা হতে পারে। আর আপনি যদি আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ২ কোটি টাকার বেশি নগদ টাকা তুলে নেন তবে আপনাকে TDS দিতে হবে।
নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, আপনি আপনার সামর্থ্য অনুসারে নগদ টাকা আপনার বাড়িতে রাখতেই পারেন, এক্ষেত্রে সমস্যার কোন কারণ নেই। তবে আপনাকে আপনার আয়ের উৎসের সমস্ত সঠিক তথ্য এবং টাকার হিসাব নিজের কাছে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি আয়কর দপ্তরের তরফে কার্যকরী সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং সময় মত আয়কর জমা দিতে হবে। অনেকেই মনে করেন বাড়িতে অধিক পরিমাণ টাকা রাখলে আয়কর দপ্তরের তরফে তা নিয়ে তদন্ত করা হবে, কিন্তু এরূপ তথ্য সম্পূর্ণরূপে ভুল। আপনার কাছে যদি হিসাব বহির্ভূত টাকা না থাকে তবে বাড়িতে যেকোনো পরিমাণ নগদ অর্থ রাখা নিয়ে কোন রূপ সমস্যা সৃষ্টি হবে না।