সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল কৃষিকাজ। আর কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের চাষবাসের ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তা নিশ্চিত করবার জন্যই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এমনই এক বিশেষ প্রকল্প হল বাংলা শস্য বীমা যোজনা, যার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কৃষকরা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়া ফসলের মূল্য ফেরত পেয়ে থাকেন।
বাংলা শস্য বীমা যোজনা কি?
বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কৃষকদের প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে তাদের বহুবার বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি বহুক্ষেত্রেই ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত পর্যন্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই সমস্ত সমস্যা থেকে কৃষকের মুক্তি দেওয়ার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে বাংলা শস্য বীমা যোজনা কার্যকর করা হয়েছে। এই যোজনার মাধ্যমে সমগ্র বাংলার কৃষকরা তাদের ফসলের বীমা করিয়ে রাখতে পারেন। ফলত পরবর্তীতে ঝড়, বন্যা, খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হলেও কৃষকরা ফসলের ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন। আর এক্ষেত্রে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো এই বীমার সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম বহন করবে রাজ্য সরকার।
তারা এই যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন?
১. যে সমস্ত কৃষকদের নিজস্ব জমি রয়েছে তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজের জমির ফসলের বীমা করাতে পারবেন। এছাড়াও রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য জানানো হয়েছে যে, নথিভুক্ত, অনথিভুক্ত বর্গাদার কৃষকরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফসলের বীমা করাতে পারবেন।
২. কৃষক বন্ধু প্রকল্প, পি এম কিষাণ যোজনা সহ রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য যোজনার অধীনে যে সমস্ত কৃষকদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে তারাও এই যোজনার আওতায় ফসলের বিমার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- টানা ৭ দিনের জন্য ছুটি থাকতে চলেছে রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলি।
বাংলা শস্য যোজনার আওতায় কি কি সুবিধা পাওয়া সম্ভব?
বন্যা, খরা, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলে বাংলা শস্য যোজনার আওতায় সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ফসল রোপণের সময় যদি ফসলের ক্ষতি হয় তাহলেও এই যোজনার আওতায় বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি ফসলের ৭৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে থাকে তবে কেবলমাত্র ২৫ শতাংশ ফসলের মূল্য ফেরত পাওয়া সম্ভব। আবার পার্বত্য এলাকায় ৭৫% ফসল নষ্ট হলে কৃষকরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের মূল্য ফেরত পেয়ে থাকেন। যদিও ফসলের বীমার সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে।
বাংলা শস্য বীমা যোজনার আওতায় আবেদন জানাবেন কিভাবে?
বাংলা শস্য বীমা যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার বাড়ির নিকটবর্তী কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের সাহায্যেই আপনি বাংলা শস্য বীমা যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কৃষি দপ্তরের তরফ আপনাকে যে ফর্মটি দেওয়া হবে তাতে আপনাকে আপনার নাম, ঠিকানা, ভোটার নম্বর, আধার নম্বর, জমির পরিমাণ, ফসল রোপণের তারিখ সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে লিখতে হবে। এরপর উক্ত ফর্মের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সঠিকভাবে অ্যাটাচ করে কৃষি দপ্তরে জমা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলা শস্য বীমা যোজনার আওতায় আবেদন জানানোর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ড।
২. আবেদনকারীর আধার কার্ড।
৩. আবেদনকারী কৃষকের জব কার্ড।
৪. কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত ডিটেইলস্।
৫. জমির খতিয়ান অথবা দলিল অথবা পাট্টা।
৬. অন্যের জমিতে চাষ করেন এরূপ কৃষকদের ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েত দ্বারা জারি করা প্রমাণপত্র এবং কৃষক যে মালিকের জমিতে চাষ করছেন তার স্বাক্ষর।