কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভোর থেকেই টানা বৃষ্টির দাপট শুরু হয়েছে। শহরের পথে পথে জল জমে যাতায়াতের অসুবিধা, কোথাও বিদ্যুতের বিভ্রাট—সব মিলিয়ে সকাল থেকেই ব্যস্ত জীবন প্রায় থমকে গেছে। ক্যালেন্ডারে দুর্গাপুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে, পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় তত বাড়ছে উৎকণ্ঠা। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তার সংলগ্ন এলাকার আকাশে হঠাৎই নতুন করে দেখা দিয়েছে অস্বস্তির ছায়া- যার টানেই বুধবার সকাল থেকেই নতুন চমক অপেক্ষা করছে রাজ্যবাসীর জন্য।
নিম্নচাপের প্রভাব
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ এবং কাছাকাছি ওড়িশার কিছু অংশে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ, যার কেন্দ্রীভূত অবস্থান উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। এর জেরেই সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক ঘণ্টায় অস্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টি নেমেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসাব বলছে, কলকাতায় একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা স্বাভাবিক তুলনায় প্রায় ২৬ গুণ বেশি। বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, আলিপুর ও মুকুন্দপুর-সহ শহরের একাধিক এলাকায় ২৪০ থেকে ২৯৫ মিমি’র বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের বেহাল অবস্থা
দক্ষিণবঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, টানা বৃষ্টি ও নিম্নচাপের ফলে জল জমে গেছে শহর আর শহরতলির বহু প্রান্তে। এর ফলে পুরনো স্মৃতিতে ফিরে এসেছে বন্যার আতঙ্ক। অবশ্য এখানেই থেমে নেই আশঙ্কা: আজ বুধবার বাঁকুড়া, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা-সহ মোট ছয় জেলায় অতি ঝড়-বৃষ্টির সাবধানতা জারি হয়েছে । কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ চমক আর দমকা হাওয়া ঘন্টায় ৩০–৪০ কিমি বেগে বইবে বলেও জানিয়েছে দফতর। কলকাতার নানা জায়গায় ইতিমধ্যেই পুজোর প্যান্ডেলে ঢোকার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অতি বৃষ্টির ভয়ে। ফলে উৎসবের মেজাজ কিছুটা হলেও স্লথ হয়ে পড়েছে।
উত্তরবঙ্গে খানিক স্বস্তির ছায়া
এদিকে উত্তরবঙ্গের আকাশে তুলনামূলকভাবে অনেকটাই স্বস্তি; সেখানকার দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তবে বজ্রবিদ্যুৎসহ মাঝারি থেকে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়াও থাকতে পারে মাঝেমধ্যে।
আগামী দিনগুলির আশঙ্কা
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বর্তমান নিম্নচাপের প্রভাব আগামী ২৪ ঘণ্টায় সামান্য কমতে পারে। তবে পুজোর মধ্যে আবারও উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে নতুন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ফের এক দফা প্রবল বৃষ্টির কারণ হতে পারে। তবে আগামীকাল বিশেষভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বেশি বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের মতো কিছু অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎসহ মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে এখনও ।
নাগরিকদের জন্য নির্দেশিকা
জলাবদ্ধ এলাকা এড়িয়ে চলতে, অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হতে এবং নিয়মিত আবহাওয়া দফতরের আপডেট দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে। সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন মৎস্যজীবীদেরও ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে প্রবেশ না করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।