রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনাকে (SIR) কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন তৎপর হয়ে উঠেছে। চলতি অক্টোবর মাসেই এসআইআর-এর সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে। বাংলায় ভোটার তালিকা সংশোধনে এই বিশেষ পদ্ধতি ভোটারদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দিল্লি থেকে আসা প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছে এবং কালীপুজো ও দীপাবলির পর এই বিজ্ঞপ্তি জারি হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। রাজ্যের সব জেলা প্রশাসনকে ইতিমধ্যে সাত দিনের মধ্যে এসআইআর-এর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সংশ্লিষ্ট ডাটা যাচাই, প্রিন্টিং ও মাঠ পর্যায়ের যাচাই-পড়তাল দ্রুত শেষ করা যায়।
গত বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে কমিশনের পরিষ্কার বার্তা ছিল, কোনও বৈধ ভোটারের নাম যেন কোনোভাবেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া না হয়। যদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র অনুপস্থিত থাকে তবুও নাম মুছে ফেলা যাবে না, কারণ খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রতিবেশী বা আত্মীয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। ভুলক্রমে নাম বাদ গেলে ওই বুথ লেভেল অফিসারের দায় থাকবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের বৈধ ভোটার হিসেবে গণ্য করা হবে। আধার কার্ড কেবল একটি পরিচয় প্রমাণ হিসেবেই গ্রহণযোগ্য হবে, নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ নয়, যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে সম্মান জানানো। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “এসআইআরে একজনও বৈধ ভোটার বাদ পড়বেন না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসআইআরের কাজ শেষ হতেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য সূচনা হতে পারে। তাই কমিশন প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে যাতে কোনও অনিয়ম বা গাফিলতির সুযোগ না থাকে। অন্যদিকে, কিছু বুথ লেভেল অফিসার অতিরিক্ত দায়িত্ব ও কাজের চাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং প্রশাসনের কাছে বিশ্রাম প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এসআইআর-র মাধ্যমে ভোটার তালিকা হবে অধিকতর নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ, যা রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আনবে।