সম্প্রতি জম্মুর আকাশ ভেঙে পড়েছে অবিরাম বর্ষণে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হঠাৎই যেন পাহাড় গিলে খেল বৈষ্ণোদেবীর (Vaishno Devi) উপত্যকাকে। একদিকে মহাপ্রলয়ের মতো ভূমিধস, অন্যদিকে আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা। এই সেই পবিত্র ভূমি, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভক্তিভরে পা রাখেন, কিন্তু আজ সেখানেই নেমেছে এক অসম্ভব নিস্তব্ধতা ও মৃত্যু-ভয়।
মঙ্গলবার রাতভর তল্লাশি চালানোর পর সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৩৬ জনে পৌঁছেছে। অন্তত ২৩ জন গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। সেনা, এনডিআরএফ ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল একসাথে হাত লাগিয়েছে উদ্ধারকাজে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩,৫০০ তীর্থযাত্রীকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও মানুষ চাপা পড়ে আছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে।
জম্মু-কাটরা রুট এখন প্রায় অচল। পাহাড় ধসের ফলে মূল যাত্রাপথ এখন পাথর, কাদা আর ভাঙা রাস্তার স্তূপে পরিণত। নদীর মতো নেমে আসা বৃষ্টির জল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেক কাঠামোই। ভারি বর্ষণে সড়ক ও রেল–দুটো পথই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই ২২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ফলে আটকে পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। এতো কিছু ফলে মন্দির কর্তৃপক্ষ আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বৈষ্ণোদেবীর যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হল।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এত প্রবল বর্ষণ বহু বছর দেখেননি তারা। আবহাওয়া দফতরের হিসাব বলছে, জম্মুতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৬ মিমি এবং উধমপুরে রেকর্ড ৬২৯.৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রশাসনের ধারণা, পরিস্থিতি এত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে না।
এই মর্মান্তিক বিপর্যয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিহতদের পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সকলে সামাজিক মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
শুধু জম্মুই নয়, প্রতিবেশী পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশেও স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অবিরত বর্ষণের কারণে। বৈষ্ণোদেবী শুধু একটি ধর্মীয় যাত্রা নয়, কোটি মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্র। কিন্তু সেই পবিত্র পথ আজ রূপ নিয়েছে এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে—যেখানে নিরাপত্তা, ভক্তি আর মানবিক জীবনের টানাপোড়েন ভেসে উঠছে একসাথে।