উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যান শুধু বন্যপ্রাণী ও সবুজের জন্য নয়, এক অদ্ভুত রহস্যের জন্যও বিখ্যাত। এখানকার মহাকাল মন্দির ঘিরে বহু বছর ধরে নানা গল্প ও কৌতূহল ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত ও পর্যটক এই মন্দিরে আসেন, শুধু ভগবান মহাকালের দর্শনের জন্য নয়, বরং মন্দির সংলগ্ন এক অজানা সময়ের রহস্যের সাক্ষী হতে।
সময়ের হেরফেরের অজানা রহস্য
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে চলা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত এই মহাকাল ধামে (Mahakal Mandir) গেলেই নাকি সময়ের পরিবর্তন দেখা যায়। পর্যটক ও স্থানীয়দের দাবি, মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলেই ঘড়ির কাঁটা প্রায় ৩০ মিনিট এগিয়ে যায়। অথচ মন্দির এলাকা ছেড়ে কয়েকশো মিটার দূরে গেলেই আবার স্বাভাবিক সময় ফিরে আসে। অনেকেই নিজের মোবাইল ও হাতঘড়ি মিলিয়ে এই অদ্ভুত পার্থক্য দেখে চমকে যান। স্থানীয়রাও বছরের পর বছর ধরে এই রহস্যের মুখোমুখি হলেও, সঠিক কারণ কেউ বলতে পারেননি।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও প্রকৃত সত্য
সম্প্রতি এই রহস্যের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সামনে এসেছে। গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া মহাকাল ধাম মন্দিরের কাছেই ইউরেশিয়ান ও ইন্ডিয়ান দুটি টেকটোনিক প্লেটের সঙ্গমস্থল আছে। এখানকার বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মন্দির চত্বরে ম্যাগনেটিক ওয়েভ বা মাইক্রোওয়েভের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ ঘটে। এর ফলেই ওই নির্দিষ্ট স্থানে মোবাইল ও ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ভুটানের টাইম জোন অনুসরণ করতে শুরু করে, ফলে সময় ৩০ মিনিট এগিয়ে যায়। তবে এই প্রভাব কেবল মন্দির চত্বরে সীমাবদ্ধ, আশেপাশে কোথাও নেই।
পর্যটকদের আকর্ষণ ও স্থানীয় বিশ্বাস
মহাকাল মন্দির শুধু রহস্য নয়, স্থানীয়দের কাছে এক বিশ্বাসের কেন্দ্র। বহু ভক্ত মনে করেন, এখানে সৎ মনোবাসনা নিয়ে এলে ভগবান মহাকাল মনোস্কামনা পূর্ণ করেন। দুর্গম পাহাড়, ঘন জঙ্গল পেরিয়ে বহু মানুষ এখানে আসেন পুজো দিতে। সময়ের এই অদ্ভুত খেলা মন্দিরকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে, ফলে পর্যটকদের কৌতূহলও বেড়েছে বহুগুণ।
আরও পড়ুনঃ কলকাতার বড় আবাসনে রাখতেই হবে ‘অতিথিদের গাড়ি পার্কিং’, নতুন বিধি আনছে কলকাতা পুরসভা
গরুমারা জাতীয় উদ্যান ও তার পরিবেশ
গরুমারা জাতীয় উদ্যান শুধু মহাকাল মন্দিরের জন্য নয়, তার বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। এখানে হাতি, গণ্ডার, গউর, হরিণ, ময়ূরসহ নানা বন্যপ্রাণী দেখা যায়। নদী, বন ও পাহাড় ঘেরা এই অঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। মহাকাল মন্দিরের রহস্য এই উদ্যানের আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
উত্তরবঙ্গের মহাকাল মন্দির তাই শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, এক অমীমাংসিত বৈজ্ঞানিক রহস্যের আধার, যা প্রতি বছর হাজারো মানুষের কৌতূহল ও বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।