বছরে বছরে বৃষ্টি হলেও দেশের তৃষ্ণা যেন মেটে না। নদী আর পুকুর শুকিয়ে যাওয়ার পর মানুষ ঝুঁকেছে ভূগর্ভস্থ জলের (Underground Water) ওপর। কিন্তু সেই ভরসাতেই ধরল ফাটল। সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, দেশের বহু জেলার পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিষয় নিয়ে আর হেলাফেলা করলে শিগগিরই জলসংকট ভয়াবহ আকার নেবে।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা দেশে ১৯৩টি জেলা এখন তীব্র জলসংকটে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, যেখানে অনেক জায়গাতেই অতিরিক্ত পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান মিলিয়ে রয়েছে রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল এই ১৯৩ জেলার মধ্যেই ১০২টিকে “ওভার-এক্সপ্লয়টেড”, অর্থাৎ ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক মাত্রায় জল উত্তোলন হওয়া এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও ২২টি জেলা আছে “ক্রিটিক্যাল” স্তরে এবং ৬৯টি জেলা “সেমি-ক্রিটিক্যাল” অবস্থায়। বিশেষ করে, রাজস্থানের ২৯টি জেলা আলাদা করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উঠে এসেছে। অর্থাৎ মরুভূমির রাজ্যে আগামিদিনে জলসংকট আরও মারাত্মক হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের।
অন্যদিকে বাংলাতেও জল সমস্যার ছায়া পড়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় রিপোর্টে নির্দিষ্ট জেলার নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে সেটিকে ‘সেমি-ক্রিটিক্যাল’ বা আংশিক সংকটজনক হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আশার আলো, রাজ্য সরকার ধাপে ধাপে বৃষ্টির জল ধরে রাখার নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেমন নদীয়ায় এই বছর নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে ঝাড়গ্রাম, মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে একই ধরনের প্রকল্প চালু হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব বলছে, কেবল আলাদা প্রকল্প গ্রহণ নয়, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পদক্ষেপই এখন জরুরি।
সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড (CGWB)-এর সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে গত বছর প্রকাশিত রিপোর্টে যে চিত্র সামনে এসেছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদদের অস্বস্তি বাড়ছে। তাঁদের মতে, ভূগর্ভস্থ জল ফুরিয়ে গেলে শুধু মানুষ নয়, সমগ্র প্রাণ-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। তাই এখনই বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ জলের সঠিক ব্যবহার, এবং জনসচেতনতা তৈরিতে আরও জোর দিতে হবে।