চেন্নাইয়ের কারুর জেলায় রাজনৈতিক রোডশো চলাকালীন ভয়াবহ পদপিষ্ট কাণ্ডে তামিলনাড়ু কেঁপে উঠেছে। শনিবার রাত পৌনে ৮টা নাগাদ ভেলুস্বামীপুরমে বিপুল জনসমাগমের মধ্যে ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তামিল সুপারস্টার ও টিভিকে প্রধান বিজয়ের রাস্তা-সভায় যোগ দিতে হাজির হয়েছিলেন কয়েকগুণ বেশি মানুষ। ভিড় সামলাতে না পেরে বিশৃঙ্খলার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান অন্তত ৩৯ জন, যাঁদের মধ্যে ১৭ জন মহিলা ও ১০টি শিশু রয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ভরতি রয়েছেন প্রায় একশোর কাছাকাছি মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রোগ্রাম শুরু হয় ছ’ঘণ্টা দেরিতে। সেই সময় হঠাৎ এক ন’বছরের বালিকা হারিয়ে যায় ভিড়ের মধ্যে। তাঁকে খুঁজে পাওয়ার জন্য মঞ্চ থেকে সরাসরি আহ্বান জানান বিজয় নিজে। সেই ঘোষণার পর মুহূর্তেই ঘটে হুড়োহুড়ি। জনতার চাপ ঠেলে বের হতে গিয়ে শুরু হয় ভয়ঙ্কর ধাক্কাধাক্কি আর তাতেই পদপিষ্টের ঘটনা।
কেন্দ্র ও রাজ্যের শীর্ষস্তরের নেতারা গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিশিষ্টরা শোকবার্তা জানিয়েছেন। তামিলনাড়ু সরকার নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা করেছেন।
অভিনেতা বিজয় নিজেও আবেগপ্রবণ বার্তা দেন। তিনি বলেছেন, তাঁর হৃদয় ভেঙে গিয়েছে, এই যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। পরের দিন সকালে তিনি ঘোষণা করেন, নিহতদের পরিবারকে তাঁর পক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। আহতদেরও টিভিকে দলের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এবং উপমুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিন ইতিমধ্যেই হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নিয়েছেন। সরকার দুর্ঘটনার তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদেশনকে নিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পুলিশের তরফে বিজয়ের দলের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরও হয়েছে।
সূত্রের খবর, অনুমতি ছিল সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষের উপস্থিতির। কিন্তু জমায়েত হয়েছিল পাঁচগুণেরও বেশি। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকেই বড় কারণ হিসাবে দেখছে প্রশাসন। ঘটনায় নিরাপত্তা ও সংগঠন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
শনিবার রাতেই চেন্নাইয়ের নিজস্ব বাসভবনে ফিরে যান বিজয়। সেখানে তাঁর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। শোক, ক্ষোভ আর আতঙ্কের আবহে এখন তদন্তের ফলাফলের দিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।