সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলা আবারও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল। সোমবার রাজ্যের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল চূড়ান্ত হলফনামা জমা দিয়েছেন শীর্ষ আদালতে। এখান থেকেই শুরু হল রায়ের পূর্ববর্তী শেষ ধাপের প্রক্রিয়া। এখন অপেক্ষা বিরোধী পক্ষের লিখিত জবাবের। তার পরেই আদালত রায় ঘোষণার পথে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মীদের বহু প্রতীক্ষিত ডিএ মামলার নিষ্পত্তি আর বেশি দূরে নয়।
রাজ্যের অবস্থান
রাজ্যের আবেদন সরল—এআইসিপিআই সূচক মেনে ডিএ দেওয়া কোনোভাবেই বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিটি অঞ্চলের মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের ধরণ ভিন্ন। সেই যুক্তি টেনেই রাজ্যের পক্ষের দাবি, কেন্দ্রীয় মানদণ্ডে ডিএ দেওয়া একান্তই রাজ্যের সিদ্ধান্ত, আদালতের জোরাজুরি এখানে প্রযোজ্য নয়। তাই স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী ডিএ নির্ধারণ করা একান্তই রাজ্যের নিজস্ব সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।
বিরোধী পক্ষের যুক্তি
এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ সরকারি কর্মীদের আইনজীবীরা। তাঁদের আইনজীবীদের বক্তব্য, ডিএ কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য নিজেই যখন এআইসিপিআই মেনে ‘রোপা’ তৈরি করেছে, তখন সূচককে মেনে ডিএ দেওয়াই বাধ্যতামূলক। বেতন কমিশনের সুপারিশও একই কথা বলছে—ডিএ কোনওভাবেই ইচ্ছেমতো আটকে রাখা যায় না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনে কিস্তিতে হলেও বকেয়া মেটাতেই হবে—এটাই বিরোধীদের জোর দাবি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরাও শুনানিতে কৌতূহলী প্রশ্ন তোলেন—এআইসিপিআই সূচক নিয়ে কি আগে কখনও সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে? সিব্বলের বক্তব্য অনুযায়ী, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, আরও সাতটি রাজ্যেই এই রায়ের প্রভাব পড়বে, কারণ সেসব রাজ্যও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না। তাই এখানকার সিদ্ধান্ত ছড়িয়ে যাবে জাতীয় স্তরে। আদালত তাৎক্ষণিক রায় ঘোষণা না করে রাজ্যকে দু’সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছে। এর পরের এক সপ্তাহের মধ্যে বিরোধীদের পাল্টা জবাব জমা পড়বে।
মামলার ইতিহাস
এই মামলা শুরু হয়েছিল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল থেকে, পরে যায় কলকাতা হাইকোর্টে। ২০২২ সালে হাইকোর্ট সরকারি কর্মীদের পক্ষে রায় দিয়ে জানায়, ডিএ তাঁদের অধিকার। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই রাজ্য পৌঁছেছিল সুপ্রিম কোর্টে। প্রাথমিক নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে ২৫% বকেয়া ডিএ পরিশোধ করতে বলেছিল। আর্থিক সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে আরও সময় চেয়েছে রাজ্য।
কর্মীদের প্রত্যাশা
এখন মামলা শেষ পর্যায়ে। দুই পক্ষের লিখিত বক্তব্য ওয়েইং স্কেলেই নির্ভর করছে চূড়ান্ত রায়ের ভারসাম্য। কর্মীদের মনে তাই প্রতীক্ষা—আদালতের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হবে কতদিনের মধ্যে, কীভাবে মিটবে বকেয়া ডিএ। সরকারি চাকরিজীবীদের সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার উত্তর আর বেশি দূরে নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।