দুপুর আড়াইটে নাগাদ ব্যস্ত দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন। নিয়ম মতোই আসা-যাওয়া করছে ট্রেন, যাত্রীদের ভিড়, কোলাহল। হঠাৎই সেই স্বাভাবিকতার ভেতর ফেটে পড়ল হইচই। কয়েকজন কিশোরের ঝগড়াঝাঁটিতে মুহূর্তের মধ্যে ওলটপালট হয়ে যায় গোটা পরিবেশ। চোখের সামনেই ঘটে গেল এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা, যা কলকাতা মেট্রোর ইতিহাসে বিরল বলেই মনে করছেন অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন, ওই দিন একদল ছাত্র মেট্রো ধরে দক্ষিণেশ্বরে এসে নামে। স্টেশন থেকে বেরোনোর আগেই তাদের মধ্যে কোনও কারণে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। কথার লড়াই গড়ায় হাতাহাতিতে। এরই মাঝে হঠাৎ এক কিশোর ব্যাগ থেকে ছুরি বার করে সহপাঠীকেই কোপায়। মুহূর্তে রক্তে ভেসে যায় প্ল্যাটফর্ম, আতঙ্কে চিৎকার শুরু হয় চারদিকে। ছুরির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে লুটিয়ে পড়ে কিশোর। তড়িঘড়ি তাকে বরাহনগর স্টেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তার।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনায় দিশেহারা যাত্রীরা। মেট্রোর মতো নিরাপদ যাত্রাপথে কীভাবে দিনের আলোয় এমন রক্তপাত ঘটল, তার উত্তর খুঁজছেন সকলে। প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়েও। প্রবেশপথে ব্যাগ স্ক্যানার ও চেকিং থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ছুরি সঙ্গে নিয়ে মেট্রোয় ওঠা সম্ভব হল, তা নিয়ে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ঘটনা জানাজানি হতেই পুলিশ ছুটে যায় স্টেশনে। এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। তদন্তকারীরা নজর দিচ্ছেন সিসিটিভি ফুটেজে। কারা কীভাবে এই সংঘর্ষ ঘটাল, আর ছুরির আঘাত কীভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠল, তা জানার চেষ্টা চলছে। সন্দেহভাজন ছাত্রদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে তদন্তকারী দল।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রক্তের দাগ সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে ‘নন-টিকিটিং জোনে’। যেহেতু এ অংশে যাত্রীরা টিকিট ছাড়া অবাধে থাকতে পারেন, তাই কীভাবে ওই ছুরি ভিতরে পৌঁছল, তা নিয়ে উঠছে একের পর এক প্রশ্ন।
এই ঘটনার রেশ টেনে অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সুড়ঙ্গ দুর্ঘটনার কথা। মাত্র মাসখানেক আগে ধর্মতলা- পার্ক স্ট্রিট সুড়ঙ্গের মধ্যে উদ্ধার হয়েছিল এক যুবকের দগ্ধ দেহ। এবার দিনের বেলায় যাত্রীদের চোখের সামনে রক্তাক্ত হত্যার অভিযোগ নতুন করে ফের কোণঠাসা করে দিলো মেট্রো কর্তৃপক্ষকে।
দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর এই ঘটনা কলকাতা শহরের ব্যস্ততম পরিবহনের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিল। মানুষ দুঃশ্চিন্তায়— মেট্রোয় চেপে যাতায়াত আদৌ কতটা নিরাপদ?