সম্প্রতি বলিউডের (Bollywood) ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় যোগ হতে চলেছে। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে মুক্তি পাওয়া কালজয়ী ছবি শোলে আবারও বড় পর্দায় ফিরছে, তবে এবার এক নতুন মোড় নিয়ে। আসলে, যে সমাপ্তি নিয়ে ছবিটি দর্শকের মনে অমর হয়ে আছে, সেই সমাপ্তিই ছিল না পরিচালকের প্রথম চিন্তা। বহু বছর লুকিয়ে থাকা আসল ক্লাইম্যাক্স এবার অবশেষে আলো দেখছে।
মূল সমাপ্তির গল্প
১৯৭৫ সালে মুক্তির আগে, পরিচালক রমেশ সিপ্পি চেয়েছিলেন একেবারেই ভিন্ন পরিণতি। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, খলনায়ক গব্বর সিং-এর মৃত্যু ঘটবে ঠাকুর বলদেব সিং-এর হাতে, যিনি পরিবারহানির প্রতিশোধ নেবেন। কিন্তু সময়ের চাপে ও পরিবেশকদের অনুরোধে সেই চিত্রনাট্যে পরিবর্তন আসে। নির্মাতারা শেষ মুহূর্তে গল্প ঘুরিয়ে দেন, আর গব্বরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই সংস্করণই সেদিন দর্শক মেনে নিয়েছিলেন, এবং ছবিটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়।
হারানো দৃশ্যের সন্ধানে
অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে, প্রকৃত সমাপ্তি ফেরত আনার উদ্যোগ নেয় ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ও সিপ্পি ফিল্মস। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও পরিশ্রমের ফলেই সম্ভব হয়েছে এ পুনরুদ্ধার। লন্ডনে একটি বিরল রঙিন প্রিন্টের খোঁজ, মুম্বইয়ের গুদামে বহুদিনের পুরোনো ক্যামেরা নেগেটিভ উদ্ধার, এমনকি হারানো দৃশ্যগুলো উদ্ধার—সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে নতুন সংস্করণ। সেইসঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বানানো হয়েছে ৪K রিস্টোরেশন, যা ৭০ মিমি প্রজেকশনের জৌলুসে দর্শক দেখবেন বড় পর্দায়।
পুনর্জন্মের মঞ্চ
আগামী ৯ থেকে ১১ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত হতে চলা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সিডনি-তেই প্রথমবার দেখানো হবে এই সংস্করণ। দর্শকরা সেখানে প্রত্যক্ষ করবেন সেই মুহূর্ত, যা প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে হারিয়ে ছিল—ঠাকুরের প্রতিশোধের আগুনে গব্বর সিং-এর সমাপ্তি।
ভারতীয় সিনেমায় এক মাইলফলক
অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্রের জয়-বীরুর বন্ধুত্ব, সঞ্জীব কুমারের ঠাকুর, আর আমজাদ খানের গব্বরের ভয়াল উপস্থিতি—সব মিলিয়েই শোলে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অনন্য স্থান অধিকার করেছে। এবারের প্রদর্শনী শুধু দর্শককে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে না, বরং ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অমূল্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। এবার এই পুনর্নির্মিত সংস্করণ ভারতের চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের পাতায় এক স্থায়ী চিহ্ন রেখে যাবে।