৩৩ বছরের অপেক্ষা ভেঙে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে সাক্ষী হয়ে রইলেন বলিউড তথা সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্র জগত। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে এমন একজন সুপারস্টারের নাম ঘোষণা হল, যার জন্য বহু দশকের অপেক্ষায় ছিল অনেক ভক্ত ও শিল্পী। হ্যাঁ, তিনি হলেন সেই কিংবদন্তি শাহরুখ খান, যাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আজ অবশেষে আলোকিত হলো একটি নতুন অধ্যায়।
তবে, এই সম্মান তার হাতে উঠেছে কোনও স্বাভাবিক ছবির জন্য নয়, বরং একটি বিশেষ সিনেমার জন্য, যা শুধু বিনোদনের বাইরে গিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছে। এই ছবির নাম, জওয়ান। এতে অভিনয় করে শাহরুখ খান প্রমাণ করেছেন তিনি শুধুমাত্র রোমান্টিক হিরো নন, বরং দেশের যুবশক্তির প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন অনবদ্য দক্ষতায়।
বর্তমান ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র সম্মান, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্র থেকে সেরা কাজ নির্বাচিত করে সেটি বিতরণ করে থাকে। ১৯৫৪ সালে এই পুরস্কার শুরু হলেও, অনেক সুপারস্টারদের হাতে এখনও এই সম্মান উঠেনি। শাহরুখ খান ছিলেন এমনই একজন, যিনি ৩৩ বছর অপেক্ষার পর এবার স্বীকৃতি পেলেন।
অ্যাটলি পরিচালিত এই ছবির সংলাপ ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গ দর্শকদের যেভাবে নাড়া দিয়েছিল, তারই স্বীকৃতি মেলে জাতীয় মঞ্চে। অনেকে ভাবতেই পারেননি যে এই ছবিই এনে দেবে শাহরুখকে জীবনের প্রথম জাতীয় পুরস্কার।
শুধু শাহরুখ খান নয়, এই আসরটি বলিউডের অন্য এক ঝাঁক তারকাকেও স্মরণীয় করে রাখল। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রানি মুখোপাধ্যায়, যিনি তাঁর জীবনের প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেলেন ‘মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে’ ছবির জন্য। মঞ্চে তাঁরা দুজন করজোরে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানালেন, যে মুহূর্তে দর্শকরা আবেগমুখর হয়ে উঠলেন।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কারজিতারা ছিলেন বিক্রান্ত মাসি (‘টুয়েলভথ ফেল’ ছবির জন্য), দক্ষিণী বিগস্টার মোহনলাল (যে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন) ও বাঙালি পরিচালক অর্জুন দত্ত (‘ডিপ ফ্রিজ’ ছবির জন্য)।
পুরস্কার অনুষ্ঠানটি আরও আলাদা হয়ে উঠেছিল, যখন ‘কিং’ ছবির শুটিং শেষ করে শাহরুখ খান পোল্যান্ড থেকে সরাসরি দিল্লির মঞ্চে আসেন। এই সাফল্যের মুহূর্তে আবেগ লুকোতে পারেননি গৌরী খানও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, এটি শাহরুখের নিরলস পরিশ্রমের ফল।
শাহরুখ খানের এই অর্জন শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতীক নয়, তা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের জন্যও বড় এক মাইলফলক। তিনি প্রমাণ করলেন যে—জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চেও তিনি অনন্য, নিঃসন্দেহে বলিউডের সেই চিরকালের বাদশা।