জীবন সম্পূর্ণরূপে অনিশ্চিত। আমাদের প্ল্যান মাফিক কখনোই সমস্ত কিছু করা সম্ভব নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের ভাবনার বাইরে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় নিয়ন্ত্রণ কিংবা রাশ কোনটাই আমাদের হাতে থাকে না। আর জীবনের যেকোনো রকম সমস্যাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রয়োজন টাকা। যার কারণে আয় এবং ব্যয় উভয়ের সাথে সঞ্চয়েরও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। নিজের স্বপ্ন পূরণ হোক বা নিজের আপনজনের স্বপ্ন পূরণ অথবা যেকোন রকম অসুস্থতার চিকিৎসা কিংবা আপাতকালীন পরিস্থিতির সুরাহা সমস্ত ক্ষেত্রেই সঞ্চিত টাকার ভূমিকা অপরিসীম। এমনকি সঞ্চিত টাকার মাধ্যমে ভারতে চলতে থাকা এই মূল্যবৃদ্ধির সুরাহাও করা সম্ভব। তবে বর্তমান যুব সমাজের মূল সমস্যাই হলো টাকা সঞ্চয় করতে না পারা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আয় এবং ব্যয়ের সঠিক হিসেব না থাকার কারণে সঞ্চয় করা হয়ে ওঠে না। তবে অধিকাংশ মানুষই জানেন না যে বেশ কতগুলো নিয়ম মেনে প্ল্যান মাফিক চললে প্রত্যেক মাসে নিজের স্বল্প আয় থেকেও যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব, যা এই অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্য বৃদ্ধির মরশুমে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে কিভাবে স্বল্প, ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে ধীরে ধীরে যথেষ্ট আমানতের টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব তা জানতে রীতিমতো আগ্রহী হয়ে উঠেছে ভারতের যুব সমাজ।
কিভাবে স্বল্প আয় থেকেও যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব:-
১. প্রত্যেক মাসের একটি স্পষ্ট বাজেট তৈরি করুন:- প্রত্যেক মাসে যে পরিমাণ টাকা আয় হচ্ছে সেই পরিমাণ টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করা হবে তা নিয়ে একটি স্পষ্ট বাজেট তৈরি করুন। যে সমস্ত ক্ষেত্রে অযথা খরচ হচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য এবং প্রত্যেক মাসে একটি নির্দিষ্ট হিসেবে অনুসারে টাকা খরচ করার জন্য বাজেট অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একটি গোটা মাসে কবে, কোথায়, কত টাকা খরচ করা হবে তার একটি স্পষ্ট বাজেট তৈরি করে নিলে অপ্রয়োজনীয় কাজে টাকা খরচ হয় না। ফলত বাজেট তৈরি করার মধ্যে দিয়ে টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ:- বাজেট তৈরি করার পাশাপাশি প্রত্যেক মাসে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমানোর লক্ষ্য স্থির করুন। একটি লক্ষ্য স্থির করা থাকলে প্রত্যেক মাসে খুব সহজেই যথেষ্ট টাকা জমানো যাবে। এমনকি নিজের পছন্দের বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্যও সঞ্চয় করতে পারেন। এর ফলে সঞ্চয়ের আনন্দ বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। যার জেরে একদিকে যেমন আনন্দের সহিত টাকা সঞ্চয় করা যায়, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই নিজের ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণ করা যায়।
আরও পড়ুন:- এই গরমে শুরু করুন আইসক্রিমের ব্যবসা এবং প্রতিমাসে ইনকাম করুন ভালো পরিমাণ টাকা
৩. অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করা:- অধিকাংশ মানুষই মাসের শুরুতে মাইনে কিংবা ব্যবসার লাভের টাকা হাতে পেয়ে ইচ্ছে মতন বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করতে শুরু করেন। কোন ক্ষেত্রে কত টাকা খরচ করলেন, তা থেকে কোন লাভ হল কিনা তার হিসাবও রাখেন না। যার ফলে মাস শেষ হওয়ার আগেই উপার্জনের টাকা শেষ হয়ে যায়। তবে সঞ্চয় করতে গেলে এই সমস্ত বেহিসাবি খরচ বন্ধ করতে হবে। নিজের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করা উচিত এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের খরচ কমিয়ে টাকা সঞ্চয় করা উচিত।
৪. বিভিন্ন ক্ষেত্রের খরচকে বিনিয়োগ হিসেবে গণনা করুন:- প্রয়োজনের খাতিরে আমাদের বিভিন্ন জিনিস কিনতে হয়। তবে কোনো জিনিস কেনা হলে সেটিকে বিনিয়োগ হিসেবে গণনা করুন। সেটি থেকে ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া গেলে আপনার চাহিদা অনুসারে পুনরায় ওই একই জিনিস কিনতে পারেন। আবার কোন জিনিসে টাকা বিনিয়োগ করার পর সেটি থেকে ভালো রিটার্ন না পাওয়া গেলে আগামীতে ওই সমস্ত জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন। জামা কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির লাইট, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে এই একই নিয়ম মেনে চলুন, তবে আপনি নিজের স্বল্প উপার্জন থেকেও যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি যে, অনেকেই মনে করেন সস্তা জিনিস কিনলে স্বল্প পয়সায় প্রচুর জিনিস পেয়ে যাবেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সস্তা জিনিস বেশিদিন টেকে না। এমনকি এই সমস্ত জিনিস ব্যবহার করে কোনো লাভও পাওয়া যায় না। সুতরাং উপরোক্ত পদ্ধতি মেনে আপনি যদি সমস্ত ভালো বিনিয়োগের হিসেব রাখতে শুরু করেন তবে আগামীতে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই যথেষ্ট ভালো জিনিস কিনে নিতে পারবেন এবং অযথা টাকা খরচ থেকে বিরত থাকতে পারবেন।
৫. ঋণের বোঝা কমানো:- যে সমস্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ রয়েছে ঋণ সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের খরচ মিটিয়ে সঞ্চয় করা তাদের জন্য একটি রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আর তাই ভবিষ্যতে সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য ধীরে ধীরে ঋণের বোঝা কমাতে হবে, নতুবা কোনভাবেই ভবিষ্যতের জন্য বৃহৎ অংকের টাকা জমানো সম্ভব হবে না। আপনার হাতে টাকা আসলে দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ দ্রুত কমানোর চেষ্টা করুন। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না, তবে ধীরে ধীরে ধীরে টাকা মিটিয়ে আগামী দিনে বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় করার চেষ্টা করতে হবে।
৬. বিভিন্ন বিলের ক্ষেত্রে ব্যয় কমান:- মোবাইল রিচার্জ -এর বিল, কেবল কানেকশন -এর বিল, বিদ্যুৎ বিল এই সমস্ত ক্ষেত্রে খরচ কিভাবে কমানো যায় তা নজরে রাখতে হবে। এই সমস্ত বিলের কারণে প্রত্যেক মাসে উপার্জনের বেশ খানিকটা অংশ খরচ করতে হয়। এই সমস্ত বিলগুলির খরচ কমানোর মাধ্যমেও যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব।
৭. বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুন:- আপনি যে টাকা সঞ্চয় করছেন তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুন। এর ফলে একদিকে যেমন বিনিয়োগের টাকা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই সঞ্চয় করার ক্ষেত্রেও আগ্রহ জন্মাবে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে যে কোথায় বিনিয়োগ করলে অধিক লাভ পাওয়া যাবে এবং কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই সুরক্ষিতভাবে রিটার্নের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে? আর এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় যে, ভারতীয় পোস্টের তরফে কার্যকরী নানা ধরনের স্কিম, প্রকল্প থেকে শুরু করে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, HDFC ব্যাংক সহ ভারতের বিভিন্ন সুপরিচিত ব্যাংকগুলির নানাবিধ স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থ পর্যন্ত ফেরত পেতে পারবেন।