সনাতন হিন্দু ধর্ম (Sanatan Religion) মতে, রাস পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হচ্ছে রাস উত্সব। ‘রস’ শব্দ থেকেই উত্পত্তি রাস শব্দের। সাধারণত, বৈষ্ণব ধর্মের বিশ্বাসী যারা, তাদের কাছে এই উত্সব হল অন্যতম। তাই রাস হল শ্রীকৃষ্ণের একটি সর্বোত্তম মধুর রস। আর লীলা মানে হল খেলা।
রাসলীলা শব্দের অর্থ হল, এই শুভ তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও গোপিনীদের সঙ্গে লীলাখেলা চলে। কথিত আছে, বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পূর্ণিমা তিথিতে রাসলীলা পালন করবেন। সুমিষ্ট ও সুরেলা বংশীধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে গোপিনীরা মায়া-প্রেমে জড়িয়ে, সংসারের মোহ-যন্ত্রণা ত্যাগ করে বৃন্দাবনে উপস্থিত হয়েছিলেন।
মায়া ও কৃষ্ণপ্রেমের টানে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিজেদের সমর্পন করেছিলেন। প্রেমের মোহে কৃষ্ণকে কাছে পেতে সকলেই উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রথমদিকে শ্রীকৃষ্ণ সখীদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিলেন। আরও জানিয়েছিলেন, যেন মন দিয়ে সংসার-ধর্ম করেন। কিন্তু মায়া আর প্রেমে অন্ধ হয়ে বাড়ির দিকে যাওয়ার কথাই কানে তোলেননি। গোপিনীদের ভক্তি দেখে মনোবাসনা পূরণ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ রাসলীলা শুরু করেন। শ্রীকৃষ্ণকে কাছে পেয়ে নিজেদের গর্ব-অহংকার বোধ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে শ্রীরাধাকে সঙ্গে করে অন্তর্ধান করেন। তখনই ভুল ভাঙে নিজেদের। ভগবানকে নিজ , একমাত্র আমার বলে ভেবে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে ওঠে। আর এই অহংবোধেই শ্রীকৃষ্ণকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণ হলেন ত্রিভুবনের অধিপতি। কোনও মায়ার জালেতাঁকে বেঁধে রাখা যায় না। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন তারা। ভক্তদের ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে গোপিনীদের মানবজীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে অন্তর শুদ্ধ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
ভক্ত গোপিনীদের ভক্তিকে সম্মান জানাতে তিনি যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ হয়ে মনোবাসনা পূরণ করেছিলেন তিনি। এরপর থেকেই প্রতিবছর জগতে রাস উত্সব পালন করা হয়ে থাকে।