উত্তরবঙ্গের (North Bengal) পাহাড়ি জনপদে একের পর এক মনোমুগ্ধকর গন্তব্য লুকিয়ে আছে, যেগুলো এখনও ভিড়ের বাইরে। তার মধ্যেই এক অমূল্য রত্ন হল মাঝিধুরা, কালিম্পং জেলার এক ছোট্ট গ্রাম। ভোরের কুয়াশা, ঘন সবুজ পাহাড়, আর শান্ত আবহে মোড়া মাঝিধুরাকে অনেকেই বলছেন ‘উত্তরবঙ্গের মিনি সুইজারল্যান্ড’। শুনে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু প্রকৃতি নিজেই যে এ জায়গাটিকে বিশেষ করে তুলেছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
তিস্তা নদীর ধারে গড়ে ওঠা মাঝিধুরার অনন্য বৈশিষ্ট্য হল তার নীরবতা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সকালে সূর্যোদয় দেখা কিংবা ঘন কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ের বুক চিরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে যেন বিদেশের কোনও উপত্যকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খানকার পাহাড়ি উপত্যকা, পাইন বন, ঘাসে ঢাকা জমি আর পাহাড় বেয়ে নামা জলের ধারা অনেকটাই মেলে সুইস ভ্যালিগুলোর সঙ্গে।
বিশেষত শীতকালে কুয়াশায় ঢাকা এই গ্রাম আরও বেশি ইউরোপিয়ান আবহ তৈরি করে। ফলে প্রথমবার যারা আসে, তাদের কাছে এই মিল সত্যিই বিস্ময়কর। সূর্যের প্রথম আলো যখন পাহাড়ের গায়ে এসে পড়ে, তখন মনে হয় যেন সুইজারল্যান্ড নয়, বাস্তবেই কোনো স্বর্গীয় উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আছেন। এখনও পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় খুব একটা না থাকায় এখানকার অজানা ট্রেক রুট, পাথুরে রাস্তা, আর বনভূমির নির্জনতা ভ্রমণপিপাসুদের দারুণ টানছে।
যারা প্রকৃত অর্থে নীরবতায় ডুব দিতে চান, শহরের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে নিজেকে খুঁজে নিতে চান—তাদের জন্য মাঝিধুরা একেবারে আদর্শ গন্তব্য। এখানকার স্থানীয় মানুষজন পর্যটকদের আতিথেয়তায় ভরিয়ে দেন। ছোট ছোট হোমস্টেতে মিলবে ঘরোয়া খাবার, সাথে থাকবে পাহাড়ি সৌজন্য আর উষ্ণতা। মানসিক প্রশান্তির জন্য কিংবা চটজলদি উইকএন্ড ট্রিপে মাঝিধুরা হতে পারে পারফেক্ট।
পৌঁছনোও তেমন কঠিন নয়। জলপাইগুড়ি বা মালবাজার থেকে গাড়িতে করে চালসা, লাটাগুড়ি হয়ে সহজেই পৌঁছনো যায় মাঝিধুরায়। পথের মাঝে কখনও ঘন জঙ্গল, কখনও আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা—সবকিছু মিলে পুরো রোড ট্রিপটাই হয়ে ওঠে অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
অফবিট গন্তব্য খুঁজে বেড়ানো ভ্রমণপিপাসুদের কাছে মাঝিধুরা এখন আস্তে আস্তে জমে উঠছে। যাঁরা একটুখানি নিস্তব্ধতা, সাথে রোমাঞ্চ খুঁজছেন, তাঁদের জন্য উত্তরবঙ্গের এই ছোট্ট গ্রাম নিঃসন্দেহে এক অমূল্য রত্ন।