পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাকে ঘিরে যে প্রহসনের সূত্রপাত ঘটেছে তা সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ প্রায় সমস্ত তথ্যই জানেন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মামলাও অন্ত নেই। তবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা পৃথক অভিযোগের কারণে মামলা চলাকালীন অবস্থাতেই পর্ষদের তরফে চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে কোনরকম দুর্নীতি ছাড়াই নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আর এরপরই ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক টেট পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এবারে আরো একবার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আশার আলো নিয়ে হাজির হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে আবারো শিক্ষক পদে বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ করা হবে, এমনটাই জানা গিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন -এর প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুসারে। এর পাশাপাশি মাদ্রাসা টেট নিয়ে আরও দুটি বিশেষ আপডেট প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাদ্রাসা টেট সংক্রান্ত এই নয়া আপডেট বারংবার চর্চায় এসেছে। আর তাই আজকের এই বিশেষ পোস্টে আমরা মাদ্রাসা টেট সংক্রান্ত এই নতুন আপডেট নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
বিগত দিনে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের তরফে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছিল যে, ১৭২৯টি শূন্যপদে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলিতে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, অ্যাডভান্সড আরবি, আরবি মাদ্রাসা এবং আরবি ইউজি স্তরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্যই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের তরফে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছিল যে, বিগত কিছুদিন ধরেই নানাবিধ কারণে রাজ্যের ৬১৪টি মাদ্রাসায় নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে উপরোক্ত শূন্য পদগুলিতে কর্মী নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে মাদ্রাসা কমিশন।
তবে মাদ্রাসা কমিশনের তরফে মাদ্রাসা টেটের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। পরবর্তীতে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে চাকরিপ্রার্থীরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আর তাতেই মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে আদালতের তরফে। আর আদালতের তরফে প্রকাশিত নতুন আপডেটে যথেষ্ট খুশি হয়েছেন সমগ্র রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরা। ইতিপূর্বে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের তরফে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল তাতে বিএড উত্তীর্ণ সমস্ত পাঠক্রমের চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না। অন্যদিকে NCTE বা জাতীয় শিক্ষণ প্রশিক্ষণ সংসদের নিয়মবিধি অনুযায়ী যেকোনো শিক্ষণ পাঠ্যক্রমের পড়ুয়াই টেটে বসার যোগ্য। এর কারণে বহু যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী বঞ্চিত হচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন:- রেশন ডিলারশিপের জন্য আবেদন করতে চান জেনে নিন সঠিক পদ্ধতি।
মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ালে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের এই সমস্ত সমস্যা দূর করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চের তরফে বিগত শুক্রবার জোড়া রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মামলার রায়ে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে যে, বিএড সহ শিক্ষক প্রশিক্ষণের যে-কোনও পাঠ্যক্রমের পড়ুয়ারাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন আয়োজিত টেট কিংবা শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আদালতের এই নতুন নিয়ম প্রাথমিকভাবে মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীদের ওপর কার্যকর হলেও আগামী দিনে সমস্ত ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদেরই সমান সুযোগ দেওয়া হবে বলেই জানা গিয়েছে। এর পাশাপাশি আদালতের তরফে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কর্তা ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে যে, চাকরিপ্রার্থীদের সমান সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা পর্ষদ একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে পারে, যার মাধ্যমে মাদ্রাসা টেটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরাই সমান অধিকার পাবে।
বিগত শুক্রবারেই আদালতের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর আরো এক মামলার রায় জানান। এর মাধ্যমে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন সহ সমগ্র চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা স্পেশাল এডুকেশন নিয়ে বি.এড কোর্সে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা বিএড উত্তীর্ণ অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীদের মতই সমান অধিকার পাবেন। সুতরাং এবার থেকে বি.এড স্পেশাল কোর্স নিয়ে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বি.এড উত্তীর্ণ করেছেন তারা সহ যেকোনো পাঠক্রমের অধীনে বি.এড সম্পন্ন করেছেন এরূপ ছাত্র-ছাত্রীদের মাদ্রাসা টেটে বসার সুযোগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই বিশ্বজিৎ বসুর জোড়া রায়ে যথেষ্ট খুশি হয়েছেন সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বি.এড উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে অনেকেই এখনো পর্যন্ত ফর্ম পূরণ করে উঠতে পারেননি। এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, ১২ই মে ২০২৩ তারিখে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য মাদ্রাসা টেটের পোর্টাল ওপেন করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছিল যে, ১২ ই জুন ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরা মাদ্রাসা টেটের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
অর্থাৎ যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা মাদ্রাসা টেটের জন্য আবেদন জানাতে চাইছেন তাদের হাতে শুধু আজকের দিনটি সময় রয়েছে। এরপর আর তারা কোনভাবেই মাদ্রাসা টেটের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন না।সুতরাং আপনিও যদি মাদ্রাসা টেটের জন্য আবেদন জানাতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে আজই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন -এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.wbmsc.com/ -এর মাধ্যমে আবেদন জানান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাদ্রাসা কমিশনের তরফে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আনার পর থেকেই মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য রাজ্যের সাধারণ মানুষের সামনে উঠে এসেছে। এমনকি বহু ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে দুর্নীতির অভিযোগও। তবে এই সমস্ত অভিযোগে আমল দিতে রাজি নন রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরা। আগামী দিনে মাদ্রাসা টেটে অংশগ্রহণের দিকেই মনোনিবেশ করেছেন সমগ্র রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা। আর ইতিমধ্যেই আদালতের তরফে মাদ্রাসা টেট সংক্রান্ত এই নতুন নির্দেশিকা প্রকাশে আসায় যথেষ্ট খুশি হয়েছেন সমগ্র রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীরা।