নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হলো শুক্রবার রাতে। দীর্ঘ অস্থিরতা ও সহিংস আন্দোলনের পর দেশের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুসিলা কার্কি। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ করালেন, আর সেই সঙ্গেই ৭৩ বছরের এই নারী প্রথমবারের মতো নেপালের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে আসীন হলেন।
শপথের পর প্রথম চ্যালেঞ্জ
শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কার্কির সামনে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব—রাস্তায় নেমে আসা সহিংসতা থামানো এবং শৃঙ্খলা ফেরানো। কয়েকদিন ধরে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক দাঙ্গা ও আগুনজ্বালার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘর ও সম্পত্তিও হামলার মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নেওয়ার আগে কার্কি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাকে কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। বিশেষ করে দুর্নীতির তদন্ত এবং আন্দোলনে পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ যে অন্তত ২০ তরুণের প্রাণ নিয়েছে—তার বিচার চাইতেই তিনি রাজি হয়েছেন নেতৃত্বে আসতে।
তরুণ প্রজন্মের আস্থা
রাজনীতিতে সরাসরি অভিজ্ঞতা না থাকলেও কার্কির সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তার দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি। সেই ভাবমূর্তিই তাঁকে বেছে নিয়েছে নেপালের ‘জেনারেশন জেড’ আন্দোলনকারীরা। তরুণদের দাবি, পুরনো দলগুলির নেতারা নিজেদের স্বার্থে জড়িয়ে পড়েছেন, আর দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহও প্রকাশ্যে কার্কির প্রতি সমর্থন জানান।
অনিচ্ছুক বড় দলগুলো
যদিও, তিন বড় দলের প্রধান—ওলি, শেরবহাদুর দেউবা এবং প্রচণ্ড—কার্কির শর্তে তেমন স্বস্তি পাননি। কারণ দুর্নীতি তদন্তে নিজেদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ আশঙ্কা তাঁদের। তবুও সেনাবাহিনী প্রধান অশোক রাজ সিগদেলের উদ্যোগে সকল পক্ষ আলোচনায় বসেন এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে কার্কির নাম ঘোষণা করেন।
নতুন পথচলা
একইসাথে নেপালের সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন কার্কির সামনে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব আন্দোলন প্রশমিত করা, শান্তি ফেরানো এবং ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সেতুবন্ধন তৈরি করা। ইতিহাসে নাম লেখানো এই নারী নেতার কাঁধেই এখন নেপালের সংকট উত্তরণের ভার।