নদীয়ার (Nadia) গ্রামীণ জনপদে এখন যেন এক আলাদা দৃশ্য। ভোর হতেই কালীগঞ্জ কিংবা নাকাশিপাড়ার দিকে গেলেই চোখে পড়ছে মানুষে ভরা ক্যাম্প। হাতে পরিচয়পত্র, চোখে একরাশ প্রত্যাশা—এরা সবাই পরিযায়ী শ্রমিক, যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বাইরে বা বিদেশে কাজ করে সংসার চালিয়ে এসেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাইরে অশান্তি আর কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা অনেককেই ফিরে আসতে বাধ্য করেছে।
এই অবস্থাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা—‘শ্রমশ্রী প্রকল্প’। রাজ্য সরকারের নতুন এই প্রকল্প যেন আশীর্বাদের মতো ধরা দিয়েছে হাজারো শ্রমিকের কাছে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কর্মসাথী পোর্টালে নাম তোলার তাড়াহুড়ো পরে যায় জেলার বিভিন্ন এলাকায়। জেলা প্রশাসনের হিসাব বলছে, কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় দেড় হাজার আবেদন জমা পড়েছে, আর তার বেশিরভাগই এসেছে তেহট্ট, নাকাশিপাড়া, করিমপুর ও কালীগঞ্জ থেকে।
কী দিচ্ছে প্রকল্প?
যে সব শ্রমিক কর্মসাথী পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করবেন, তাঁরা এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন। শুধু তাই নয়, আগামী এক বছর প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে সাহায্য মিলবে। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি রয়েছে দক্ষতা উন্নয়নেরও উদ্যোগ। উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের আওতায় তাঁদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আয়ের পথ খোলা হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
আবেদন প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানেন যারা, তাঁরা সরাসরি কর্মসাথী পোর্টালে নাম তুলতে পারেন। আবার গ্রামে গ্রামে সরকারিভাবে ক্যাম্প বসিয়ে অফলাইনেও আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের মতে, অনলাইন আবেদনেই শ্রমিকদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন—“পরিযায়ী শ্রমিকরা আমাদের অর্থনীতির শক্তি। তাঁদের প্রতি সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।” ঠিক সেই ভাবনাতেই ‘শ্রমশ্রী প্রকল্পকে’ শুধু আর্থিক অনুদান নয়, বরং সামাজিক সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের ভরসা হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন তিনি। এজন্যই নতুন মোবাইল অ্যাপ চালুর পরিকল্পনাও চলছে।
সব শেষে বলাই যায়, দ্রুত আবেদন আর নাম নথিভুক্তর ভিড়ে বোঝাই যাচ্ছে, শ্রমশ্রী প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আশা কতখানি। শুধুই টাকা নয়, বরং দক্ষতার নতুন সুযোগ এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ—সব মিলে প্রকল্পটি যেন তাঁদের জীবনে নতুন ভরসার আলো এনে দিচ্ছে। তাই শ্রমশ্রী শুধু প্রকল্প নয়, বরং পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে এক অর্থনৈতিক পুনর্জন্মের প্রতিশ্রুতি।