মিজোরামের মানুষের জন্য এক দারুন ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ দশক পুরোনো অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে কারণ শীঘ্রই তাদের রাজ্যের রাজধানী আইজল রেলপথ দেশের মূল রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে চলেছে। পাহাড়ি অঞ্চলের জটিল ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই নতুন রেললাইন তৈরি হয়েছে, যা শুধু মিজোরামেই নয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য যুগান্তকারী।
এই নতুন রেললাইনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫১ কিলোমিটার, যা বৈরবী থেকে সাইরাং পর্যন্ত প্রসারিত। এখানকার প্রকৃতি মোটেই সহজ নয়—শুধুমাত্র পাহাড় কাটতে হয়েছে নয়, নির্মাণ করতে হয়েছে অন্তত ৪৫টি সুড়ঙ্গ এবং ১৪৩টি ব্রিজ। তাদের মধ্যে এক একটি ব্রিজের উচ্চতা প্রায় ১১৪ মিটার, যা ভারতের ইতিহাসে কুতুব মিনারের থেকেও প্রায় ৪২ মিটার উঁচু। এমন চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে এটি তৈরি হওয়া প্রকৌশলশিল্পের এক বিরল উদাহরণ।
এতদিন মিজোরামের মানুষের প্রধান যোগাযোগ ছিল সড়কপথ আর আকাশপথ। তবে এখন থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন কলকাতা, দিল্লি এবং গুহরাটির সঙ্গে রেলযোগাযোগ শুরু হয়েছে। এই নতুন রেললাইন চালু হওয়ার ফলে মিজোরামের অর্থনীতি এবং পর্যটন ক্ষেত্র এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, এই প্রকল্প শুধুমাত্র যানবাহনের জন্য নয়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কারণ মিজোরাম ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য। এছাড়াও এখানে স্থানীয় কৃষিজাত পণ্যগুলি দ্রুত দেশে পৌঁছে যাবে। ফলে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান বাড়বে। যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করলেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন সার্ভিস: দিল্লি-আইজল রাজধানী এক্সপ্রেস, কলকাতা-আইজল এক্সপ্রেস এবং গুওহাটি-আইজল এক্সপ্রেস। ফলে এই শীর্ষ শহরগুলি এখন মিজোরামের সঙ্গে সরাসরি রেলসংযোগ পাবে।
পাশাপাশি এই রেললাইন সীমান্তবর্তী এলাকার সুরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে যাতে সামরিক ও প্যারামিলিটারি বাহিনী দ্রুত অবস্থান বদলাতে পারে। তাই ধীরে ধীরে এই রেললাইন হয়ে উঠবে মিজোরামের নতুন ভরসার সেতু, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলে দেবে। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে, যা দশকের পর দশক জটিল প্রকৃতির মধ্যে নির্মাণ কাজ চালিয়ে সফল হয়েছে।
সুতরাং, তাই মিজোরাম আজ শুধুমাত্র এক নতুন রেললাইন পায়নি, বরং পেয়েছে এক নতুন সম্ভাবনা, উন্নতি। এমন ভাবেই মিজোরামের মানুষ একটি বড় ধাপ এগোলেন, যা তাদের জীবন যাত্রায় স্থায়ী পরিবর্তন আনবে।