বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক ঘিরে রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষস্তরে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র মন্তব্য, মুখ্যসচিবের উপস্থিতি এবং নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা বাড়ছে। কমিশন ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, আর বিরোধী শিবিরও সুযোগ নিয়ে ফ্রন্ট খুলেছে।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের কাজকর্ম নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ তোলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের সামনেই সিইও নাকি অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন এবং দুর্নীতিতেও জড়িত। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি—সিইও যেন “বেশি বেড়ে না খেলেন”—শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমেই নয়, পৌঁছে যায় কমিশনের কানেও।
কমিশনের অসন্তোষ
এই বিতর্কিত মন্তব্যের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কমিশনের মতে, এমন সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে মুখ্যসচিবের বৈঠক থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। সরকারি পদে থেকে রাজনৈতিক মন্তব্যের পরিসরে থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটাই এখন প্রশ্ন তুলছে কমিশন। কমিশন মনে করছে, মুখ্যসচিবের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের সঙ্গে এমন মুহূর্তে উপস্থিতি বেমানান।
বিরোধী শিবিরের পদক্ষেপ
এদিকে, বিরোধী শিবিরও পিছিয়ে নেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি সিইও দফতরে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, যা নিয়ম মেনে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা গণতন্ত্রের পরিপন্থী এবং তা নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি হুমকি দেওয়ার সমান। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন—সাসপেন্ড হওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার বাইরে কেন আর কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হয়নি এবং কেন কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়নি।
আইনগত প্রেক্ষাপট
সিইও দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লোকপাল আইনের নিয়ম অনুযায়ী কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হলে লিখিত প্রমাণ থাকা বাধ্যতামূলক। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেই শাস্তি ও জরিমানা হতে পারে। কমিশনের মত, এই নিয়ম রাজ্যের মুখ্যসচিবের অজানা থাকার কথা নয়।
সব মিলিয়ে, কমিশনের অসন্তোষ এখন স্পষ্ট—প্রশাসনিক শৃঙ্খলার ভেতর রাজনীতির ঢেউ যে চাপ তৈরি করছে, তা নবান্ন থেকে নিয়ে কমিশন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।