রাজ্যের রাজনীতিতে ফের চাঞ্চল্য। নবান্ন থেকে নতুন করে আক্রমণের সুর তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সরাসরি নিশানা করলেন নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা SIR-এর নামে রাজ্যের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, আর তার নেপথ্যে রয়েছে বিজেপির প্রভাব।
মমতার স্পষ্ট অভিযোগ—“বিহারে এসআইআর হয়েছে কারণ সেখানে ডবল ইঞ্জিন সরকার। কিন্তু বাংলার বাস্তবতা আলাদা।” তিনি জানান, যখন রাজ্য দুর্যোগ সামলাচ্ছে আর সামনে কালী, জগদ্ধাত্রী ও ছটপুজোর মতো বড় উৎসব, তখন এভাবে কর্মীদের হুমকি দেওয়া গণতন্ত্রের পরিপন্থী। আরও এক ধাপ এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তীব্র টিপ্পনী কাটেন—“বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বেশি দড়! সময় এলে বলতে হবে, ওঁর বিরুদ্ধেও নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে।”
এর আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন—একজন বৈধ ভোটারের নামও বাদ পড়লে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে তৃণমূল দিল্লিতে কমিশনের দফতর ঘেরাও করবে। মমতার বক্তব্যে সেই হুঁশিয়ারিরই প্রতিধ্বনি শোনা গেল।
অন্যদিকে, বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী কমিশনের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “ভোটার তালিকা যাচাই শেষ হলেই ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ পাবে চূড়ান্ত তালিকা।” তাঁর দাবি, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে সন্দেহজনকভাবে ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে—১০৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে বৃদ্ধি নাকি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত।
মমতা এই দাবিতে কড়া জবাব দিয়ে বলেন, “১৫ দিনে তালিকা প্রকাশ করা অসম্ভব। ঈশ্বর এলেও হবে না।” আরও বলেন, যখন কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন দেড় কোটি ভোটার বাদ যাবে, তখন পরিষ্কার বোঝা যায় পরিকল্পনাটা কোথা থেকে তৈরি হচ্ছে। তিনি কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং অসমে পশ্চিমবঙ্গবাসীদের এনআরসি নোটিস পাঠানোর ঘটনাও স্মরণ করান।
রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য শুধু এসআইআর নিয়ে নয়, বরং ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতেরই ইঙ্গিত বহন করছে।