দূর্গাপুজো শেষ হতেই কলকাতায় ম্যালেরিয়ার (Malaria) সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। শহরের পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, মাত্র চার সপ্তাহেই আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,১৫৬, সেখানে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মিলিয়ে তা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এই দ্রুত বৃদ্ধি পুর প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনিয়মিত আবহাওয়া। বর্তমানে শহরের বাতাসে আর্দ্রতা অত্যধিক, যা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নাগরিকদের অসচেতনতা—পুরসভার বারবার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও অনেকে এখনো ঘরবাড়ি পরিস্কার রাখছেন না, বা জল জমতে দিচ্ছেন। ফলে অ্যানোফেলিস প্রজাতির মশা নির্ভয়ে লার্ভা তৈরি করছে।
পুরসভার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শহরের উত্তর ও মধ্য কলকাতার এলাকাগুলিতে সংক্রমণ বেশি। ইতিমধ্যে ১১টি ওয়ার্ডকে স্পর্শকাতর তালিকায় রাখা হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতেও বিশেষ নজরদারি চলছে, কারণ বৃষ্টির জল জমে থাকা সেখানে মশার প্রজননের জন্য আদর্শ হয়ে উঠছে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদদের মতে, অ্যানোফেলিস মশা সাধারণত রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে কামড়ায়, আর এদের বসবাস বেশি দেখা যায় উঁচু তলার ঘরগুলিতে।
পুরসভা বর্তমানে রাসায়নিক মিশ্রিত স্প্রে ও ক্লোরিন ব্যবহার করে সংক্রমণ রোধের চেষ্টা করছে। তবুও নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি সমস্যা বাড়াচ্ছে। মশারি ব্যবহার, জল জমে থাকা প্রতিরোধ ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি মনোযোগ এখনো পর্যাপ্ত নয়।
সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা স্পষ্ট—সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণও জরুরি। ব্যক্তিগত সুরক্ষা, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, ও জল জমতে না দেওয়া—এই মৌলিক পদক্ষেপগুলোই ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রুখতে সহায়ক হতে পারে। একসঙ্গে প্রচেষ্টা চালালেই শহরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।