পুজোর ঢাকের আওয়াজ এখনো শুরু হয়নি, তবুও চারপাশে উৎসবের আবহ তৈরি হয়ে গেছে। প্রতিবারের মতোই এবারও মণ্ডপে বসবেন মহিষাসুরমর্দিনী মা দুর্গা (Maa Durga)। তাঁর দশ হাত ভরপুর শক্তিশালী অস্ত্রে, কিন্তু পাশে সবসময় দেখা যায় একটাই সঙ্গী—সিংহ। বিজয়ার মঞ্চে দেবীর মহিমা আর সিংহের গর্জন যেন একই সুরে মিলেমিশে যায়। কিন্তু প্রতিবছরই একটা প্রশ্ন থেকে যায়—কেন দেবী দুর্গাকে আমরা সবসময় সিংহের পিঠে দেখি? বাঘ, হাতি বা ঘোড়া নয়, সিংহই কেন?
পৌরাণিক কাহিনির রূপকথা
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পৌরাণিক কাহিনির দিকে একটু নজর দিতে হবে। সেখানে আমরা এক নয়, একাধিক ব্যাখ্যা পেয়ে থাকি। শোনা যায় মা পার্বতী কঠোর তপস্যায় মগ্ন ছিলেন শিবকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য। ঠিক সেই সময় এক ক্ষুধার্ত সিংহ তাঁকে শিকার করার জন্য তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়।আক্রমণ না করে প্রাণীটি চুপটি করে অপেক্ষা করছিল দেবীর ধ্যান ভাঙ্গার। বছরের পর বছর অপেক্ষার পর, যখন দেবী তপস্যা শেষ করেন, তখনই তিনি সেই বিশ্বস্ত ও ধৈর্যশীল সিংহকেই নিজের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। অর্থাৎ, মা দুর্গা শুরু থেকেই বেছে নিলেন এমন একজন ‘সাথী’, যে শক্তির পাশাপাশি ধৈর্যের প্রতীক।
দেবীর অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে উপহার
আবার “শ্রীশ্রী চণ্ডী”-তে ভিন্ন এক বর্ণনা পাওয়া যায়। অসুরবধের জন্য দেবী যখন প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন সব দেবতা তাঁকে অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করেন। সেই সময় পর্বতের রাজা গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে এক অদম্য, মহাশক্তিধর সিংহ প্রদান করেন। তখন থেকেই এই সিংহ-ই হয়ে ওঠে দেবীর যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গী, শক্তি আর বীরত্বের প্রতীক হিসাবে।
শত্রুকেও বাহন!
আশ্চর্যের বিষয়, কিছু লোককথায় বলা হয়ে—শুধু সিংহ নয় বাঘও দেবীর বাহন, আবার তান্ত্রিক ব্যাখ্যায় বলা হয়—অসুরই তাঁর বাহন! তার মানে, দেবী এতটাই শক্তিশালী যে শত্রুকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেন।
সর্বোপরি এইসব কাহিনির ভেতর দিয়ে একটা সাধারণ সূত্র বেরিয়ে আসে। সিংহ মানেই শক্তি, নেতৃত্ব, ভয়হীনতা—যা মা দুর্গার চরিত্রেরই প্রতিফলন। তাই প্রতিবার দুর্গাপুজোর মণ্ডপে দেবীকে দেখা যায় তাঁর সিংহসহ, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অসুর যতই শক্তিশালী হোক না কেন, শেষমেশ শুভ শক্তি জয়ী হবেই।