রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে এক দারুণ সুখবর। আবারও বাড়তে চলেছে গরমের ছুটির সময়সীমা। বাংলা নববর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠরত শিশুরা গরমের ছুটির অপেক্ষায় দিন গোনে। রাজ্যজুড়ে চলতে থাকা গরমের তীব্র দাবদাহে গরমের ছুটিতে খানিকটা হলেও স্বস্তি পায় রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠরত শিক্ষার্থীরা। গরমের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বেশ খানিকটা আগেই গরমের ছুটি শুরু হয়েছিল। নবান্নের নির্দেশিকা অনুসারে, ২ রা মে, ২০২৩ তারিখ থেকে গরমের ছুটি শুরু হয়েছিল। তবে গরমের ছুটি কবে থেকে শুরু হচ্ছে তা জানানো হলেও গরমের ছুটি কবে শেষ হবে তা জানানো হয়নি। আর তাতেই গরমের ছুটি কবে শেষ হতে চলেছে তা নিয়ে রাজ্যের ছাত্রমহলে বারংবার নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। গরমে ছুটি সংক্রান্ত নানারকম নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসায় কবে গরমের ছুটি শেষ হতে চলেছে তা নিয়ে বারংবার বিভ্রান্ত হচ্ছে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা। আর এবারে গরমের ছুটি সংক্রান্ত সমস্ত রকম বিভ্রান্তি দূর করতে এক নতুন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুসারে জানা গিয়েছে যে, আগামী দিনে ফের গরমে ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধি হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে নবান্নের তরফে জানানো হয়েছিল যে, আগামী জুন মাসের ৫ তারিখ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে পুনরায় পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছিল যে, ৭ ই জুন ২০২৩ তারিখ থেকে রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পুনরায় পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে এবারে আবারও সেই বিজ্ঞপ্তিতে পরিবর্তন এনে নবান্নের এক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় -এর তরফে সমগ্র রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, ৫ ই জুন কিংবা ৭ ই জুন নয়, আগামী ১৫ ই জুন, ২০২৩ তারিখে রাজ্যের সমস্ত প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে পুনরায় পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া চালু হবে। অর্থাৎ গরমের ছুটির সময়সীমা বাড়িয়ে ১৪ ই জুন করা হলো। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চলতে থাকা এই গরমের আবহে আবারো অতিরিক্ত ১০ দিন ছুটি পেতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে পাঠরত শিক্ষার্থীরা।
আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশ অনুসারে, আগামী বেশ কিছুদিন রাজ্যব্যাপী হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ চলছে। ফলত এইসময়ে স্কুলে গেলে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে উঠতে পারে, এমনকি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়ে যায়, আর তাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে গরমের ছুটি বৃদ্ধির এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এমনটাই জানানো হয়েছে নবান্নের তরফে প্রকাশিত তথ্যে। এদিন গরমের ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে যে, রাজ্যব্যাপী তাপপ্রবাহ চলার কারণে গরমের ছুটির জন্য নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার দিকটি মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এইরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সময়ের পূর্বেই আগাম গরমের ছুটি জারি করার কারণে শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে যে খামতি রয়ে গেছে তা পূরণ করার জন্য শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ গরমের ছুটির পর পুরো দমে ক্লাস শুরু হতে চলেছে রাজ্যের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে।
আরও পড়ুন:- এপার বাংলার ইন্দুবালা ভাতের হোটেল এবার ওপার বাংলাতেও।
এই অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাস শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। এমনকি কতক্ষণ পর্যন্ত ক্লাস চলবে তাও পর্ষদের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হবে, যদিও এখনও পর্যন্ত ক্লাসের সময়সীমা সংক্রান্ত কোনো নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। তবে এখানেই শেষ নয়, স্কুলের শৃঙ্গলা বজায় রাখতেও যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি না নিয়ে কোনোভাবেই স্কুল চত্বরের বাইরে যাওয়া যাবেনা। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ অনুসারে স্কুলের টিফিন ব্রেককেও কাজে লাগাতে হবে, টিফিনের সময়ে শিক্ষকরা টিফিন খাওয়া অথবা প্রয়োজনীয় কোনও কাজ করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে পারবেন না। তবে টিফিনের সময় কি করা হবে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকের মতামতই চূড়ান্ত নির্দেশ হবে। প্রধান শিক্ষকের থেকে আগাম অনুমতি না নিয়ে কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষাকর্মী স্কুল ছাড়তে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে গরমের ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ক্লাস সম্পর্কিত এক বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে পর্ষদের তরফে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গরমের ছুটির সময়সীমা বাড়ানো সংক্রান্ত ঘোষণায় যথেষ্টই খুশি হয়েছেন রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা। অনেকেই মনে করছেন তাপপ্রবাহ চলাকালীন ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে গেলে তাদের যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো, এমনকি হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়, আর তাই বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গরমের ছুটি সময়সীমা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত একেবারে যথোপযুক্ত। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাসের সিদ্ধান্তেও যথেষ্ট খুশি হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের খামতি দূর করা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন শিক্ষামহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।