বাংলা নববর্ষ শুরু হতে না হতেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তীব্র গরম পড়তে শুরু করেছিল। নববর্ষের পর থেকেই গরমের কারণে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা ছিল সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের আমজনতার। আর তাতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফ রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার দিকটি মাথায় রেখে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্যে সমগ্র রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছিল যে, তাপপ্রবাহের কারণে রাজ্যের শিশু শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরীদের শরীর খারাপের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এমতাবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীদের হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনাও রয়ে যায়, আর এই সমস্ত বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে সমগ্র রাজ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
এখনো পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে গরমের দাবদাহ কমেনি। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা এবং সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার মত বিষয়গুলি মাথায় রেখেই বিগত ১৫ ই জুন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার গরমের ছুটি কাটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে স্বাভাবিকভাবে পঠন-পাঠনের প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবে পঠন-পাঠন শুরু হতেই ছাত্র-ছাত্রীদের সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষা নিয়ে এক বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হলো শিক্ষা দপ্তরের তরফে। ইতিমধ্যেই শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত এই নির্দেশিকা নিয়ে রাজ্যের ছাত্রমহলে এবং অভিভাবকদের মধ্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত এই নয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা নিয়ে কি বলা হয়েছে?
সমগ্র রাজ্যের বিদ্যালয় এবং ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে জারি করা এক নির্দেশিকার মাধ্যমে শিক্ষা দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে যে, ১ লা আগস্ট ২০২৩ তারিখ থেকে শুরু করে ৮ ই আগস্ট ২০২৩ তারিখের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু করে দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে রাজ্যের সমস্ত স্কুলগুলিকে। অর্থাৎ ১ লা আগস্ট থেকে ৮ ই আগস্ট তারিখের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি সম্পন্ন করতে হবে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্কুলগুলিকে। এমনকি সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত সমস্ত রকম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে রাজ্যের স্কুলগুলির উপরে। আগামী দিনে রাজ্যের সমস্ত স্কুলগুলি অত্যন্ত দ্রুত এই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করবে বলেই আশা রাখছেন শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা।
কিভাবে শেষ হবে সিলেবাস?
অত্যন্ত গরম এবং তাপ প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের গরমের ছুটি কার্যকর করা হয়েছিল এমনকি নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও পুনরায় গরমের ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। বিগত ১৫ ই জুন ২০২৩ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে গরমের ছুটির শেষে পুনরায় পঠন-পাঠন শুরু করা হয়েছে। তার ফলেই ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে পড়েছে। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার সিলেবাসও সম্পন্ন হয়নি। আর তাতে ই যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন রাজ্যে প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকেরা। তবে ইতিপূর্বে এই সমস্যা সমাধানও দেয়া হয়েছিল শিক্ষা দপ্তরের তরফে। যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাস শেষ করার জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ নেওয়া হয়েছিল শিক্ষা দপ্তরের তরফে।
তবে এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি টিফিন পিরিয়ডকেও কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। গরমের ছুটি শেষে নতুন করে স্কুল খোলার সময় এক নির্দেশিকার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের এই সমস্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হয়েছিল শিক্ষা দপ্তরের তরফে। আর সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণার এই বিশেষ নির্দেশিকায় স্কুলগুলির অতিরিক্ত ক্লাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে। যার জেরে শিক্ষা দপ্তরের এই নির্দেশিকা যথেষ্ট আশা জোগাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের। মনে করা হচ্ছে রাজ্য সমস্ত স্কুলগুলিতে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে অতিরিক্ত ক্লাস গ্রহণের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে।
আরও পড়ুন:- আপনার আধার কার্ডের সঙ্গে কতগুলি ফোন নম্বর লিঙ্ক রয়েছে, জেনে নিন এখনই।
জানেন কি গরমের ছুটির পরেও পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীরা এক নতুন ছুটি পেতে চলেছেন?
শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকা এবং অতিরিক্ত ক্লাসের বিষয়গুলি পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের আশা জোগালেও নতুন একটি বিষয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গব্যাপী পঞ্চায়েত নির্বাচন আয়োজিত হতে চলেছে। আর পঞ্চায়েত নির্বাচন আয়োজিত হলে রাজ্যের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে ভোটকেন্দ্র রূপে ব্যবহার করা হবে। সুতরাং পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা আবারও এক নতুন ছুটি পাবেন বলেই দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন সুত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে। ফলত আবারও কিছুটা সময়ের জন্য রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে শিক্ষা মহলের কর্তা ব্যক্তিদের তরফে।
আর গরমের ছুটি, পঞ্চায়েত ভোট এই সমস্ত কাটিয়ে কিভাবে সিলেবাস শেষ করা হবে, এই চিন্তাতেই ভাঁজ পড়েছে শিক্ষক সহ অভিভাবকদের কপালে। এমনকি এই পরিস্থিতিতে কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাবে তা নিয়েও যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন রাজ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা।