মঙ্গলবার সকালে শহর কলকাতা জেগে উঠল যেন এক জলমগ্ন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা নিয়ে। রাতভর অঝোর বর্ষণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি প্রায় অচল হয়ে পড়ে, কোথাও হাঁটু তো কোথাও কোমর ছাপিয়ে জল জমে যায়। তার জেরে কার্যত থমকে গেল শহরের জনজীবন। দুর্গাপুজোর ঠিক আগে এ ধরনের অপ্রত্যাশিত দুর্যোগে উদ্বেগ ছড়িয়েছে শুধু মহানগরীতেই নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে।
রেকর্ডভাঙা বৃষ্টি ও জলজট
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত থেকে ভোরের মধ্যে শহরে নেমেছে গড়ে প্রায় ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি। এটি গত প্রায় চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। তার ফলেই উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণের বেহালা, পূর্বের সেক্টর ফাইভ থেকে পার্ক সার্কাস—সব জায়গায়ই রাস্তাঘাট অচল হয়ে পড়ে। গঙ্গায় ভরা জোয়ার থাকায় জল নামতে দেরি হয়, বহু বহুতলের নিচতলা, দোকানপাট ও হাসপাতাল প্লাবিত হয়। আবার কোথাও কোথাও বিদ্যুতের লিফট অকেজো হয়ে পড়ে।
প্রাণহানি ও প্রশাসনিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া
বৃষ্টি থেমে গেলেও শহরে নামে শোকের ছায়া। বৈদ্যুতিক তারে ও খোলা খুঁটিতে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অন্তত ১১ জন প্রাণ হারান, বেশিরভাগই কলকাতার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। নরেন্দ্রপুরে পুকুরে মাছ ধরতে নামলেও ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এই ঘটনার পর ক্ষোভে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির আশ্বাস দেন এবং সরাসরি সিইএসসি কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য—প্রতিবারই এমন দুর্ঘটনার পরও বিদ্যুৎ সংস্থা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে না, উৎসবের মুখে এত প্রাণহানি শহরবাসীর কাছে ভয়ের।
সিইএসসি’র দাবি
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ খারিজ করে সিইএসসি সোশ্যাল মিডিয়ায় পালটা সাফাই দিয়েছে। সংস্থার তরফে জানানো হয়, শহরের স্ট্রিটলাইট ও ট্রাফিক সিগন্যাল তাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। তাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর দায়ভার চাপানো উচিত নয় বলেই দাবি তাদের। সংস্থা আরও জানায়, টানা বৃষ্টির মধ্যে তাদের টেকনিক্যাল দল কাজে নেমেছে এবং সতর্কতার জন্য বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রশাসনের উদ্যোগ
কলকাতা পুরসভার তরফে মঙ্গলবার ভোর থেকেই শুরু হয় জল নামানোর প্রচেষ্টা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজে কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের মানুষের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে দ্রুত স্বস্তি ফেরানোর আশ্বাস দেন।
উৎসবের আগে নতুন শঙ্কা
প্রশ্ন হলো, এখানেই কি থেমে আছে বিপদ? আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফের একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যা আরও ভারী বৃষ্টি ডেকে আনবে। ফলে উৎসবের মুখে ফের জলজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে কলকাতায়। প্রস্তুতি কতটা নেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে এখনই শুরু হয়েছে জোরালো আলোচনা।