রাতভর আছড়ে পড়া বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শহর। মাত্র কয়েক ঘণ্টার টানা বর্ষণে শতবর্ষের রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। ভোর হতেই দেখা দেয় ভয়াবহ চিত্র—রাস্তাঘাট তলিয়ে, ঘরবাড়ি প্লাবিত, আর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুও হয়েছে। বৃষ্টির জল যেন এক রাতেই তিলোত্তমাকে ডুবন্ত নগরীতে পরিণত করল।
জলাবদ্ধতার দাপটে থমকে শহর
রাতভর মুষলধারে বৃষ্টিতে কলকাতার বুকে জমে উঠেছে জনজীবন পঙ্গু করে দেওয়া জলাবদ্ধতা। এর ফলেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, অফিস, বাজার এমনকি আবাসিক এলাকার ভেতরেও হাঁটু কিংবা কোমর সমান জল জমে গেছে। জলাবদ্ধতার জেরে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয় বিদ্যুৎ দফতর। আর এই বিপর্যয়ের মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ঘটে আটজনের, আহত আরও অনেকে। মোমিনপুরের হোসেন শাহ রোড, বেনিয়াপুকুর, কালিকাপুর, হরিদেবপুর ও বেহালাতে এই ঘটনা ঘটেছে।
উদ্ধার তৎপরতার মাঝে বিপাকে মানুষ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতর, দমকল ও স্থানীয় প্রশাসন রাত থেকেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। জলাবদ্ধ রাস্তায় আটকে পড়া গাড়ি থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। শহরের নানা প্রান্তে বসানো হয়েছে কন্ট্রোল রুম। তবে অব্যাহত বর্ষণের কারণে বহু এলাকা এখনও যোগাযোগহীন হয়ে পড়েছে।
নিম্নাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা
শহরের দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নিম্নাঞ্চলগুলোতে জল নামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এ জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি চলতেই থাকবে। প্রশাসন জানিয়েছে, বিপর্যয়ের প্রভাব কমাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। তাই প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করে অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মৃতের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা ও একটি করে সরকারি চাকরির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শহরের বুকে শোকের ছায়া
হঠাৎ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকগ্রস্ত গোটা শহর। পরিবার হারানো মানুষের কান্না মিশে গিয়েছে বৃষ্টির স্রোতে। নাগরিকরা বলছেন, যদি আগে থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হত তবে হয়তো এমন প্রাণহানি ঘটত না।
এই ভরা জলাবদ্ধতার মাঝে এখন একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে—আগামী দিনের জন্য প্রশাসন কতটা প্রস্তুত? কারণ, বৃষ্টি থেমে গেলেও এই দুর্যোগের ক্ষত শুকোতে সময় লাগবে অনেক।