কলকাতায় ভাসছে রাস্তাঘাট, পাড়া-মহল্লাসহ একাধিক বাড়ি ও আবাসন। টানা ভারী বর্ষণে মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে জলমগ্ন অবস্থা। স্কুলযাত্রী থেকে শুরু করে অফিসগামী, প্রত্যেকেরই দিনের শুরু হয়েছে ভোগান্তি দিয়ে। কোথাও বাস থমকে দাঁড়িয়েছে, কোথাও ঘরে ঢুকে পড়েছে জল। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে—কে দায়ী এহেন পরিস্থিতির জন্য?
সকালবেলার অভিযোগ
দিনের শুরুতেই নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁর দাবি, ডিভিসির খামখেয়ালির জন্যই এই জলাবদ্ধতার সমস্যা তীব্র হয়েছে।ডিভিসি একতরফাভাবে জল ছাড়ায় রাজ্যের নদীনালা আগে থেকেই উপচে পড়েছিল। তার ওপরে আবার হঠাৎ প্রলয়ঙ্করী বৃষ্টি। সব মিলিয়ে শহরের জলযন্ত্রণার জন্য সরাসরি ডিভিসিকে কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রচুর জল নেমে আসছে। অথচ ড্রেজিংয়ের কোনও সঠিক ব্যবস্থা হয়নি বলেই দুর্যোগ আরও প্রকট হয়েছে।
বিকেলের পাল্টা বার্তা
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছে দামোদর ভ্যালি করপোরেশন। বিকেলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডিভিসির জল সরাসরি কলকাতায় যায় না। আমতা হয়ে তা গঙ্গায় মিশে যায়। সুতরাং শহরের জলাবদ্ধতার সঙ্গে ডিভিসির কোনও সম্পর্ক নেই। কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের দায়মুক্ত করার চেষ্টা করেছে ডিভিসি।
নাগরিকদের স্বস্তি ফেরাতে উদ্যোগ
এদিকে শহরের জলমগ্ন পরিস্থিতিতে নবান্নে চালু হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সর্বক্ষণের নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সব অফিসকে আগামী দু’দিন ওয়ার্ক ফ্রম হোমে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারি সমস্ত স্কুল-কলেজও সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হয়েছে।
দুর্ঘটনা ও শোকপ্রকাশ
এই বিপর্যয়ের মধ্যেই কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে। নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। মৃত পরিবারের এক সদস্যকে চাকরিরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
দিনভর কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় জল জমে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছয় সাধারণ মানুষের। অতিবৃষ্টির ফলে শহর কলকাতা বারবার প্লাবিত হচ্ছে—প্রশাসন দায়ী করছে ডিভিসিকে, আর ডিভিসি দিচ্ছে একেবারেই উল্টো ব্যাখ্যা। সবশেষে, দায়-দায়িত্ব নিয়ে চাপানউতোরের মাঝে পথেঘাটে আটকে পড়া সাধারণ মানুষই যে প্রকৃত ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে, তা দিনের শেষে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।