কলকাতা (Kolkata) শহরে নিরাপত্তা জোরদারে নতুন পদক্ষেপ নিল শহর পুলিস। চুরি, প্রতারণা বা বড় ধরনের অপরাধ এড়াতে এবার শহরের প্রতিটি নাগরিককে তাদের বাড়িতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়া এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সাহায্য করা গৃহকর্মীর বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে। হঠাৎ করে এই নিয়ম কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে? শহরের সাম্প্রতিক নানা ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, একাধিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন পরিচিত মুখ—কখনও গৃহকর্মী, কখনও ভাড়াটিয়াই। এমন বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের পক্ষে অপরাধ রোধ করা প্রায় অসম্ভব।।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টের মাধ্যমে নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জরুরি বার্তা দিয়েছে কলকাতা পুলিশ—“সবার সহযোগিতাতেই এলাকা নিরাপদ হবে।” শুধু অনুরোধ নয়, এইবার বিষয়টি আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আস্তে চাইছেন। ২৪ জুলাই প্রকাশিত পুলিস কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি নং ৩০২/আরপিটি অনুযায়ী, সদ্য কার্যকর হওয়া ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS), ২০২৩-এর ধারা ১৬৩ মেনে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। অর্থাৎ, একজন বাড়ির মালিক যদি নতুন ভাড়াটিয়া রাখেন বা গৃহকর্মী নিয়োগ করেন, তবে তাদের পরিচয় ও প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশের মতে, এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে তদন্তে জটিলতা অনেকটাই কমবে এবং অপরাধ দমন আরও কার্যকর হবে।
এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া এবং গৃহকর্মী—দুই শ্রেণির ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা ফর্ম চালু করা হয়েছে। অনলাইনে দেওয়া এই ফর্ম পূরণ করে সহজেই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যাবে। পাশাপাশি ‘বন্ধু অ্যাপ’-এর মাধ্যমেও তথ্য জমা দেওয়া যাবে। পুলিশ মনে করছে, দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ হলে চুরি, প্রতারণা থেকে শুরু করে বড় অপরাধ পর্যন্ত অনেকটাই আটকে দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ অপরিচিতদের পরিচয় খতিয়ে না দেখেই আশ্রয় দেওয়ার প্রবণতা শহরে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরবর্তীতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
কলকাতা পুলিস ইতিমধ্যে জানিয়েছে, এই তথ্য দেওয়া যাবে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণের মাধ্যমে কিংবা ‘বন্ধু অ্যাপ’ ব্যবহার করেও। দুই ধরনের পৃথক ফর্ম প্রকাশ করা হয়েছে—একটি ভাড়াটিয়ার জন্য, অন্যটি গৃহকর্মীর জন্য। এর ফলে প্রতিটি বাড়ির তথ্য এক জায়গায় সংরক্ষিত থাকবে, যা ভবিষ্যতে কোনও তদন্ত প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত সহায়ক হবে।
গণসচেতনতার স্বার্থে সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার শুরু করেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গৃহকর্মী বা ভাড়াটিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই না করেই বাড়িতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এরফলে কখনও কখনও গোপনে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, তদন্তে বাড়ছে জটিলতা। পুলিশের তরফে স্পষ্ট বার্তা—এখন কোনও তথ্য গোপন করলে তা আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের কাছে সামান্য ঝামেলা মনে হলেও, প্রশাসনের যুক্তি একটাই—“সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিলে আপনার পাড়াও, আপনার বাড়িও থাকবে নিরাপদ।”