কলকাতার বুকে একের পর এক নতুন মেট্রো পরিষেবা (Metro Service) চালু হলেও বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনের মানুষ আজও নতুন ঘরের আশা থেকে বঞ্চিত। ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে যেসব বাড়ি ভেঙে মেট্রোর কাজ হয়েছিল, তাদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি ছ’ বছরেও পূর্ণ হয়নি। এই পরিস্থিতি নিয়েই গত শুক্রবার কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে তুমুল আলোচনা হয়।
মেয়রের অসন্তোষ
শুক্রবার কলকাতা পুরসভার মাসিক বৈঠকে এই ইস্যুটি সামনে আনেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। জবাবে মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্বীকার করেন যে সমস্যা দীর্ঘায়িত হয়েছে। তিনি জানান, মেট্রো রেল দপ্তর অর্থাৎ কেএমআরসিএল-এর সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সংস্থা ২৩টি নকশা জমা দিয়েছে এবং পুরসভা সেগুলি অনুমোদন করেছে। তবু কাজ শুরু হয়নি। মেয়রের কথায়, “ছ’ বছর কেটে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ঘরে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি—এটাই সবচেয়ে হতাশার।”
প্রতিদিনের ভয়ের মধ্যে বসবাস
দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনের অনেক পরিবার এখনও অস্থায়ী ঠাঁইয়ে থাকেন। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেট্রো প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁদের ঘরবাড়ি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বহু বাড়িতে বড় ফাটল ধরেছে, কেউ কেউ ঘর ছেড়ে অস্থায়ী জায়গায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ ছ’বছর কেটে গেলেও স্থায়ী পুনর্বাসন এখনো কার্যকর হয়নি। তাই সেখানকার অনেক পরিবারের প্রশ্ন—মেট্রো যাত্রীদের সুবিধার আড়ালে তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা কেন উপেক্ষিত হচ্ছে?
মেট্রো সুবিধা অথচ বঞ্চিত মানুষজন
শহরজুড়ে মেট্রোর সুবিধায় যাতায়াত সুগম হলেও বিপরীতে বৌবাজারের বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির দুর্দশা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। শুক্রবার শিয়ালদহ–এক্সপ্লানেড পথে মেট্রোর উদ্বোধনের সময়ই বৌবাজারে ক্ষতিগ্রস্তরা ধর্না দেন। তাঁদের দাবি, সরকার ও কেএমআরসিএল যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক।
পুরসভার শর্ত এবং সামনে কী
মেয়র জানিয়েছেন, মেট্রো পরিষেবা চালু হলেও অন্তত দশ বছর পর্যন্ত কেএমআরসিএল-কে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতেই হবে। পুরসভা এই নির্দেশ দিয়েছে। তবে বাসিন্দাদের মতে, রক্ষণাবেক্ষণ যতই হোক মূল সমাধান একটাই—নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা। তাঁদের বক্তব্য, “প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে বাঁচতে চাই না, অবিলম্বে নিরাপদ পুনর্বাসন চাই।”
ফলে, আধুনিক শহরের দৌড়ে মেট্রো যতই গতি আনুক, তার তলা দিয়ে ঢাকা রয়ে গিয়েছে বৌবাজারের কয়েকশো পরিবারের বাস্তব দুঃখকথা।