কলকাতার সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতা ও মৃত্যুর ঘটনা এখন আদালতের কড়া নজরদারির আয়তায়। টানা বৃষ্টির জেরে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত জলমগ্ন হয়ে পড়ে, আর সেই জলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক মানুষ। সাধারণ ভোগান্তির বাইরে গিয়ে এই ক্ষয়ক্ষতি আদালতের সামনে বড় প্রশ্ন তুলেছে—শহরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে। কতটা সুরক্ষিত কলকাতাবাসি? এর দায় কার?
কলকাতা হাইকোর্ট পরিষ্কার জানিয়েছে, একে অন্যের উপর দোষ চাপানো আর চলবে না। বেঞ্চ সোজাসুজি নির্দেশ দিয়েছে, সিইএসসি ও কলকাতা পুরসভাকে লিখিত আকারে জানাতে হবে কেন এমন বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হলো, এবং ভবিষ্যতে তা এড়াতে কী করণীয়। একইসঙ্গে নিকাশি ব্যবস্থার মানচিত্র, খাল দখল বা বহুতল নির্মাণের প্রভাব, সব কিছু আদালতের কাছে খতিয়ে দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিইএসসির অবহেলার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। নিহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও চাকরির আশ্বাস দেওয়া হলেও, আদালতের নজরে সেই উদ্যোগ যথেষ্ট কি না। তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কারণ ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই একাধিক মামলা জমা পড়েছে হাইকোর্টে। আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকীর আবেদনকে জনস্বার্থ মামলার আকারে গ্রহণ করেছে আদালত, যার শুনানি শিগগিরই হতে পারে।
গত রবিবার রাতে কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে শহরে ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি নেমেছিল। সকাল গড়াতে বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসা জলে একে একে প্রান গিয়েছে এগারো জনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ সংযোগে ঝুঁকি ছাড়াও শহরের দুর্বল নিকাশি এই বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করেছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্বয়ং ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু প্রাণহানির ধারা থামানো যায়নি।
এখন সবার চোখ আদালতের দিকে। হাইকোর্ট কী নির্দেশ দেয়, প্রশাসন কতটা জবাবদিহি করে, আর সংস্থাগুলি কতটা আন্তরিকভাবে উত্তর দেয়—সেটাই ঠিক করবে, ভবিষ্যতের কলকাতা কতটা নিরাপদ হবে বৃষ্টির দিনে।