ভাবুন তো—প্রতি মাসে কষ্ট করে রোজগার থেকে সামান্য টাকা জমাচ্ছেন। এজেন্ট বাড়ি বাড়ি আসছে, আপনি তাকে কিস্তির টাকা দিচ্ছেন। সেও হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে রসিদ। নিশ্চিন্তে মনে ভাবছেন সব ঠিকঠাকই চলছে। কিন্তু একদিন আচমকা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারলেন—আপনার অ্যাকাউন্টে এক টাকাও জমেনি! বরং অ্যাকাউন্টই তালাবন্ধ হয়ে গেছে। সাথে সরকারি ভর্তুকি, ঋণের সুবিধা—সব আটকে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই, চিন্তায় মাথা খারাপ তো হবেই।
ঠিক এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটছে কাটোয়ায়। একের পর এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সামনে এসে অভিযোগ করছেন—বছরের পর বছর তাঁরা কিস্তি দিয়ে গিয়েছেন ব্লকের নিযুক্ত এক এজেন্টকে।এজেন্ট রসিদ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই রসিদ যে আসলে ভুয়ো তা বুঝতেই তাদের এক থেকে দুবছর লেগে গেছে। যতক্ষনে তারা বুঝতে পেরেছে ততক্ষনে টাকা উধাও।
অভিযোগ
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাদের দাবি, করোনা থেকেই শুরু যত গণ্ডগোলের। কিন্তু সমস্যা এখন এতটাই বেড়েছে যে অনেকের অ্যাকাউন্ট দু’তিন বছর ধরে লক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেই কারণে শুধু ঋণ শোধ নয়, সরকারি প্রকল্পের টাকা পর্যন্ত তুলতে পারছেন না তাঁরা। বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর মহিলারা আরও বলেন, “আমরা সময়মতো সব কিস্তি দিয়েছি। অথচ ব্যাংক বলছে কোনো টাকা জমা পড়েনি ! হাতে রসিদ থাকা সত্ত্বেও , সরকারি টাকার খোঁজ নেই। কাকে বলব, কোথায় যাব? কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা আমরা ”।
রাজনীতির আঁচ
ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বও। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা পিন্টু মণ্ডল প্রকাশ্যেই বললেন—
“একাধিক গ্রামে একই কাণ্ড। এজেন্ট ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছে, সব হজম করে দিয়েছে। আর আজ সাধারণ মহিলা নাগরিকদের ভুগতে হচ্ছে।”
তাঁর কথাই স্পষ্ট করছে, বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াস। এর মাধ্যমেই গোটা অঞ্চলের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা এক বড়ো দুর্নীতির চিত্র ধরা পড়েছে।
ব্যাংকের অবস্থান
অবশ্য ব্যাংকের তরফে দাবি—জমা হওয়ার কথা থাকলেও কিস্তির টাকা জমা হয়নি। তাই ঋণ বাকি রয়ে গেছে। সাথে এতো দিন টাকা না জমা পড়ায় একাউন্ট লক হয়েছে। ফলে লক্ষীর ভান্ডার সহ গ্যাসের ভর্তুকি কোনো কিছুই আর পাওয়া যাবে না। সমস্যার সমাধানের জন্য মহিলাদের লোকআদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পুলিশি তদন্তও চলছে বলে জানা গেছে।
তবে গোষ্ঠীর মহিলারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—যদি দ্রুত সমস্যার সমাধান না হয়, তবে তাঁরা রাস্তায় নেমে সরব হবেন।