আজ ৩ রা অক্টোবর দেশজুড়ে যে বনধের ডাক নিয়ে অজানা আশঙ্কা ছড়িয়ে ছিল, শেষ মুহূর্তে এসে তার ছবিটাই পাল্টে গেল। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (All India Muslim Personal Law Board) পূর্বে যে কর্মসূচির ঘোষণা করেছিল, বুধবার রাতের বৈঠকে তারা নিজেরাই তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানাল। ফলে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত দোকানপাট, ব্যাংক কিংবা পরিবহনে অচলাবস্থার যে পূর্বাভাস তৈরি হয়েছিল, আপাতত তার কোনওটিই ঘটছে না।
বোর্ডের পক্ষ থেকে মূলত ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধিতায় এই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল সকাল আটটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত দেশজুড়ে বাণিজ্যিক ও আর্থিক কার্যকলাপ প্রায় থমকে দেওয়ার। এতে স্কুল-পরিষেবা থেকে শুরু করে ব্যাংক, চেক ক্লিয়ারেন্স, ঋণ প্রসেসিং এমনকি এটিএম পরিষেবাতেও জট পড়তে পারত। পরিবহন কমে গেলে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কল্পনা করাই যাচ্ছিল না। আর সেই আতঙ্কেই বনধ ঘিরে গাঢ় হয়েছিল জনজীবনে অনিশ্চয়তার ছায়া।
কিন্তু বুধবার রাতেই অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড জরুরি বৈঠক ডেকে পরিস্থিতির ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়। তারা জানায়, ৩ অক্টোবরই কয়েকটি রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব থাকায় মানুষের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই আপাতত বনধ না করে পরবর্তী সময়ে নতুন করে তারিখ ঘোষণা করা হবে। বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি সংবাদমাধ্যমকে জানান, আন্দোলনের ব্যাপারে বোর্ড তাদের অবস্থানে অটল থাকলেও, ধর্মীয় উৎসবের দিনে সাধারণ মানুষকে কোনও অসুবিধায় ফেলতে চায় না।
এ সিদ্ধান্তে অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন সাধারণ নাগরিকরা। বিশেষত দুর্গাপূজো পরবর্তী একাদশীতে ব্যাংক খোলার অপেক্ষায় থাকা গ্রাহকদের শঙ্কা কেটে গেছে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে এটিএম পরিষেবা—সবই আগের মতো চলবে। আর্থিক ও যাতায়াত সংক্রান্ত জটিলতা এড়ানোয় সাধারণ মানুষ যেমন নিশ্চিন্ত, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও দেশজুড়ে বনধের অভিজ্ঞতা রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন শ্রম আইন সংশোধন ও বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে একদিনের বনধ ডেকেছিল। সেবারও ব্যাঙ্ক ও পরিবহন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল। তবে ৩ অক্টোবরের বনধ স্থগিত হওয়ায় আপাতত উৎসব-পরবর্তী জনজীবনে বড় কোনও আঁচ পড়ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।