পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের জন্য ছুটি সংক্রান্ত এক বিশেষ আপডেট ঘোষণা করা হলো নির্বাচন কমিশনের তরফে। দীর্ঘ দেড় মাস পর রাজ্যের সমস্ত সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে স্বাভাবিকভাবে পঠন-পাঠনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে। আর এরই মধ্যে নতুন ছুটি সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা সামনে আসতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ছুটি সংক্রান্ত এই বিশেষ খবরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবকদের মাথায় রীতিমতো হাত পড়েছে। আগামী দিনে কি কারণে রাজ্যের স্কুলগুলি ছুটি থাকতে পারে তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রমহলে বারংবার বিভিন্ন প্রকার আলাপ-আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে। এমনকি রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং অভিভাবকদের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র ছাত্রীদের নতুন ছুটি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমস্ত প্রকার তথ্য আলোচনা করতে চলেছি।
কি কারণে আগামী দিন রাজ্য স্কুলগুলি ছুটি থাকতে চলেছে?
ইতিপূর্বেই বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছিল যে, আগামী মাসের সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে আগামী দিনে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা টানা এক সপ্তাহ ছুটি পাবেন বলেই দাবি করা হয়েছিল এই সমস্ত সূত্রের তরফে প্রকাশিত তথ্যে। বর্তমানে এই সমস্ত সূত্রের খবরে সিলমোহর দিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটি সংক্রান্ত এক বিশেষ তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে সমগ্র রাজ্যে জনগণের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, আগামী ৮ ই জুলাই থেকে শুরু করে ১১ ই জুলাই পর্যন্ত সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পঞ্চায়েত ভোট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যার কারণে পঞ্চায়েত ভোটের পোলিং স্টেশনগুলির তালিকায় রাজ্যের বহু সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের নাম রয়েছে।
আর এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে এক সপ্তাহের জন্য ছুটি থাকতে পারে বলেই জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রকাশিত তথ্যে। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হবে তা সম্পর্কিত কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানানো হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরই এই বিষয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের তরফে ছুটি সংক্রান্ত এই সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনার পর থেকেই আগত জুলাই মাসের কত তারিখ থেকে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটি পেতে চলেছেন তা জানতে রীতিমতো উৎসুক হয়ে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা।
আরও পড়ুন:- তারাহুরোয় ভুল একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন? ফেরত পাবেন কিভাবে?
পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত এই নতুন ছুটি নিয়ে কিরূপ প্রতিক্রিয়া মিলেছে রাজ্য সাধারণ জনগণের কাছ থেকে?
বাংলা নববর্ষের শুরু থেকেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অসহ্যকর গরম পড়তে শুরু করে, আর এই গরমের সঙ্গী হিসেবে ছিল তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহের কারণে শিশুদের নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে হিটস্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে বলেই আশঙ্কা করেছিলেন ডাক্তাররা। যার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে গরমের ছুটির জন্য নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এমনকি এই তাপপ্রবাহের কারণেই গরমের ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধি পর্যন্ত করা হয়েছিল। যার কারণে রাজ্যে ছাত্রছাত্রীরা বেশ খানিকটা সময় স্কুলের গণ্ডির বাইরে ছিল। আর তাতে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার সিলেবাস কমপ্লিট করা সম্ভব হয়নি। এমনকি আগামী বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস কিভাবে সম্পন্ন হবে তা নিয়েও যথেষ্ট চিন্তায় ছিলেন রাজ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা। আর এমতাবস্থায় শিক্ষা দপ্তরের তরফে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার সময়সীমা ঘোষণা করা হলে সমগ্র রাজ্যে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাথায় রীতিমতো হাত পড়েছিল।
তবে সিলেবাস সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানও জারি করা হয়েছিল শিক্ষা দপ্তরের তরফে। শিক্ষা দপ্তরের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল যে, গরমের ছুটির কারণে সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার সিলেবাস সম্পূর্ণ না হওয়ায় রাজ্যের সমস্ত স্কুলগুলিতে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে। এমনকি শনিবারেও সম্পূর্ণ দিবস স্কুল খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা দপ্তরের তরফে। শিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত ক্লাস সংক্রান্ত এই নির্দেশিকায় পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকরা খানিকটা হলেও আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নতুন ছুটি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনায় আরো একবার সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার সিলেবাস এবং মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস কিভাবে শেষ হবে তা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে রাজ্যের ছাত্রমহলে।
শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী কিংবা অভিভাবক নয় ছাত্রছাত্রীদের সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারাও। যদিও শিক্ষামহলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একাংশের মতে যতটা সম্ভব অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হবে। গরমের ছুটি এবং নির্বাচনের কারণে যে ছুটি ঘোষণা হতে চলেছে তার জন্য যেন ছাত্র-ছাত্রীদের সেকেন্ড সাবমিট পরীক্ষার রেজাল্টে কোনরূপ প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করতেই উদ্যোগী শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু করে দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সেকেন্ড সামেটিভ পরীক্ষা নয়। ২০২৪ সালের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এগিয়ে আসার কারণে এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাস নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক সহ শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে আগামী দিনে খুব শীঘ্রই অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস কমপ্লিট করানো সম্ভব হবে বলেই জানানো হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তরফে।