সরকারি চাকরি অনেকের কাছেই আজও ভরসার নাম। স্থায়ী আয়, পেনশন এবং নিরাপত্তা— এই ত্রিস্তম্ভই সাধারণ মানুষকে কেন্দ্রীয় চাকরির দিকে টেনে আনে। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, কেন্দ্রের অধীনে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে দ্রুত। লোকসভায় এক লিখিত জবাবে কেন্দ্র স্বীকার করেছে, গত পাঁচ বছরে নিয়মিত কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই আবারও প্রশ্ন উঠছে, বেসরকারিকরণের (Privatization) রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে সরকার কি কর্মসংস্থানের ভিতকে দুর্বল করে তুলছে?
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলিতে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯.২ লক্ষ। ২০২৩-২৪ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৮.১২ লক্ষে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে লক্ষাধিক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন বা নতুন পদ সৃষ্টিই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এই সময়েই একটি ব্যতিক্রম সামনে এসেছে। অনগ্রসর শ্রেণির (OBC) কর্মী সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ১.৯৯ লক্ষ থেকে দাঁড়িয়েছে ২.১৩ লক্ষে। কেরলের সিপিএম সাংসদ সচিতানন্থম বিষয়টি সংসদে তুললে, প্রতিমন্ত্রী বি. এল. বর্মা সেই তথ্য প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণ নীতি নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। রেল, বিমান পরিষেবা, কয়লার খনি থেকে শুরু করে জীবনবীমা— প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বেসরকারি অংশগ্রহণের বাড়বাড়ন্ত। এমনকি প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহ্যবাহী সৈনিক স্কুলও বাদ যায়নি। ইতিমধ্যেই কয়েকটি স্কুল চালু হয়েছে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে।সেখানকার কর্মীদের দাবি, এর ফলে একদিকে যেমন চাকরির সংখ্যা কমছে, অন্যদিকে যারা এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তাঁদের কাজের বোঝা বহুগুণে বাড়ছে।
তবে কেন্দ্রের যুক্তি ভিন্ন। তাদের দাবি, লোকসানে থাকা দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে যাতে সেগুলি নতুনভাবে কার্যকরী হতে পারে। অর্থাৎ উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিকে গতি দেওয়া, চাকরি ছাঁটাই নয়। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, যদি তাই হয় তবে লাভজনক সংস্থার শেয়ার বিক্রির কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ মনে করছে, এই নীতি কেবল কর্মসংস্থানের সংকট আরও বাড়াচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা আর বাড়ছে অতিরিক্ত কাজের চাপ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারি চাকরির সুযোগ কমে যাওয়া কেবল কর্মী পরিবারগুলির ভবিষ্যৎ নয়, বরং দেশের সামগ্রিক কর্মসংস্থান চিত্রেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। তাঁদের মতে, লাভজনক সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে কোষাগার ভরানো স্বল্পমেয়াদে সাহায্য করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ফল ভীষণ ক্ষতিকর হতে পারে।