মাদাগাস্কার থেকে মরক্কো (Morocco)—আফ্রিকার পথে পথে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে নতুন প্রজন্মের ক্ষোভ। বেকারত্ব, দুর্বল জনসেবা, দুর্নীতি আর জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে অসন্তোষ এতটাই গভীর হয়েছে যে তরুণেরা আর নীরব নেই। শান্তিপূর্ণ শ্লোগান থেকে শুরু করে হঠাৎ রক্তাক্ত সংঘর্ষ, একটার পর একটা দেশ আজ যুব আন্দোলনের ঝড়ে কাঁপছে।
মাদাগাস্কারে সম্প্রতি শান্তিপূর্ণ মিছিলেই নেমেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।বিদ্যুৎ ও পানির সংকট ঘিরে সেখানকার তরুণেরা প্রথমে হাতে ফুল আর শান্তির বার্তা নিয়ে নেমেছিল সড়কে। কিন্তু মুহূর্তেই ছবিটা পাল্টে যায়, যখন পুলিশ টিয়ার গ্যাস আর গুলি ছুড়ে মিছিল ভাঙার চেষ্টা করে। জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে, অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তাতে ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি, বরং তাকে পদত্যাগের দাবি করছে জনগণ।
এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হলো এর সংগঠন কাঠামো, যা তৈরি হয়েছে ফেসবুক, টিকটক, ডিসকর্ডের মতো মাধ্যমকে কেন্দ্র করে। প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জনপ্রিয় জাপানি এনিমে ওয়ান পিস-এর পাইরেট পতাকা—যা নেপাল ও এশিয়ার অন্য দেশে জেন-জেডদের আন্দোলনে ইতিমধ্যেই দেখা গেছে। নতুন প্রজন্ম এই বিশ্বায়িত প্রতীককে নিজেদের ক্ষোভ ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার ভাষায় রূপান্তর করেছে।
শুধু মাদাগাস্কার নয়, আন্দোলনের ঢেউ পৌঁছে গেছে আফ্রিকার অন্যত্রও। কেনিয়ায় আর্থিক বিল বিরোধী বিক্ষোভে রাজধানীর সংসদ ভবন একসময় আগুনে জ্বলেছিল। পশ্চিম আফ্রিকার টোগোতে হাজারো যুবক প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছে। আর উত্তরের মরক্কোতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তরুণেরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সংস্কার দাবি করছে এবং আগামী বিশ্বকাপকে ঘিরে স্টেডিয়াম নির্মাণকে ‘অযৌক্তিক ব্যয়’ বলে প্রতিবাদ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আফ্রিকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেকার তরুণ জনগোষ্ঠী ও ভাঙা জনসেবা। জেন-জেডরা শুধু তাত্ক্ষণিক সুবিধা নয়, পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছে। তারা আর শাসকদলের প্রচার বা প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত হচ্ছে না। এক নতুন প্রজন্ম দৃঢ়ভাবে বলছে—ন্যায্য অধিকার না পেলে রাস্তাই হবে তাদের আসল সংসদ।