দৈনন্দিন জীবনযাপনের উন্নতি থেকে শুরু করে যেকোনো আপাতকালীন পরিস্থিতির জন্য, এমনকি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্যও মানুষ সঞ্চয় করে থাকেন। যার কারণে পোস্ট অফিস থেকে শুরু করে ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয় স্কিমগুলি ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ব্যাংকের তুলনায় ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে কার্যকরী সঞ্চয় স্কিমগুলির আওতায় ভারতীয় জনগণ অধিকতর সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর তাই ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে ভারতীয় পোস্ট অফিসের এই সঞ্চয় স্কিমগুলির অধীনে বিনিয়োগের প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই সমস্ত সঞ্চয় স্কিমগুলিতে আবেদনের পূর্বে আপনাকে এই স্কিম সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে জানতে হবে। যার কারণে আজকের এই পোস্টে আমরা ভারতীয় পোস্ট অফিসের সেরা স্কিমগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করতে চলেছি।
১. মান্থলি ইনকাম স্কিম:- ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে সমগ্র দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাধারণ জনগণের কথা মাথায় রেখে এই বিশেষ স্কিম কার্যকর করা হয়েছে। মান্থলি ইনকাম স্কিম নামে পরিচিত এই স্কিমের আওতায় একজন ব্যক্তি সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। নাগরিকদের সুবিধার্থে আরো জানিয়ে রাখি যে, আপনারা সিঙ্গেল একাউন্ট এবং জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমেও পোস্ট অফিসের মান্থলি ইনকাম স্কিমে আবেদন জানাতে পারবেন। সুতরাং যে সমস্ত ব্যক্তিরা জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে আবেদন জানাবেন তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সীমা ৯ লক্ষ টাকা। পোস্ট অফিসের তরফে এই স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তিদের বিনিয়োগের উপরে ৭.৪ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি ৫ বছরের জন্য এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং সময়সীমা ফুরোলে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি সিঙ্গেল একাউন্টে ৯ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন তবে প্রতি মাসে ৫৩২৫ টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন।
২. কিষাণ বিকাশ পত্র:- কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকরী এই স্কিমের আওতায় যেকোনো ভারতীয় নাগরিকই বিনিয়োগ করতে পারবেন। এমনকি ১০ বছরের কম বয়সী বালক-বালিকাদের জন্যও এই স্কিমের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন, যদিও সেক্ষেত্রে উক্ত বালক বা বালিকার পিতা কিংবা মাতাকে তার অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করতে হবে। তবে শুধুমাত্র পোস্ট অফিসের মাধ্যমে নয় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক কিংবা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমেও আপনারা এই স্কিমের আওতায় নিজেদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই স্কিমের আওতায় আপনি নূন্যতম ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আপনার সামর্থ্য অনুসারে যেকোনো অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে এখানেই শেষ নয়, এছাড়াও আপনারা সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট এবং জয়েন্ট একাউন্ট উভয়েরই মাধ্যমে কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই স্কিমের আওতায় ৭.৫% হারে সুদ দেওয়া হয়ে থাকে। নাগরিকদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, আপনারা ৫ বছর কিংবা ১০ বছরের জন্য কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিনিয়োগের সময়সীমা ফুরোলে আপনি সুদ সহ বিনিয়োগের সমস্ত টাকা রিটার্ন পেয়ে যাবেন। তবে কোন ব্যক্তি যদি কিষাণ বিকাশ পত্রের অধীনে ১০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করেন তবে তিনি যা বিনিয়োগের করবেন তার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত পাবেন।
৩. টাইম ডিপোজিট স্কিম:- পোস্ট অফিসের টাইম ডিপোজিট স্কিম এমন একটি সঞ্চয় প্রকল্প যার মাধ্যমে আপনি সুদ সহ নিশ্চিত রিটার্ন পেয়ে যাবেন এবং করের ক্ষেত্রেও ছাড় পেয়ে যাবেন। মাত্র ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ এর গুণিতকে যেকোনো অর্থের অংক আপনি এই টাইম ডিপোজিট স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগের কোন উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। পোস্ট অফিসের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, এই স্কিমের আওতায় ১ বছর, ২ বছর, ৩ বছর এবং ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা সম্ভব। এছাড়াও আপনি বিনিয়োগের সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ বছর পর্যন্ত করতে পারবেন। ১ লা এপ্রিল ২০২৩ তারিখ থেকে কার্যকরী নিয়ম অনুসারে এই স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তিরা ৭.৫% হারে সুদ পাবেন। ভারতীয় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, সিঙ্গেল এবং জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ জন ব্যক্তি এই স্কিমের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও ১০ বছরের বেশি বয়সী বালক-বালিকাদের জন্য তাদের পিতা মাতার তত্ত্বাবধানে একাউন্ট খোলা সম্ভব। যদিও এই স্কিমের আওতায় আপনি কত টাকা ফেরত পাবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনি টাইম ডিপোজিট স্কিমে কত টাকা বিনিয়োগ করছেন তার উপরে। এক্ষেত্রে আপনি যদি ৫ লক্ষ টাকা ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করেন, তবে আপনি ৫ বছর পরে ৭,২৪,৯৭৪ টাকা ফেরত পাবেন। অর্থাৎ ৫ বছরে এই স্কিমের মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত ২ লক্ষ টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- স্বল্প পুঁজিতে টি শার্টের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন? জেনে নিন এখনই।
৪. ন্যাশনাল সেভিংস স্কিম বা এনএসসি:- ভারতে বসবাসকারী যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এই ন্যাশনাল সেভিংস স্কিমের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে এই স্কিমের আওতায় একজন ব্যক্তি ৭.৭ শতাংশ সুদ পেয়ে থাকেন। মাত্র ১০০ টাকা থেকে এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করা সম্ভব এবং গ্রাহক তার সুবিধা অনুসারে সিঙ্গেল একাউন্ট এবং জয়েন্ট একাউন্টের মাধ্যমে এই স্কিমের অধীনে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যাশনাল সেভিংস স্কিম বা এনএসসির আওতায় ভারতীয় জনসাধারণ একেবারে ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। ৫ বছর পর বিনিয়োগকারীকে সুদ সমেত বিনিয়োগের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়াও এই স্কিমের আওতাধীন ব্যক্তি আয়করের ক্ষেত্রেও ছাড় পেয়ে থাকেন। আপনি যদি ৫ বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ন্যাশনাল সেভিংস স্কিমে বিনিয়োগ করেন তবে এই স্কিম থেকে আপনি ১৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৪ টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ ৫ বছরে আপনি এই স্কিম থেকে ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
৫. সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম:- সমগ্র ভারতের বয়স্ক নাগরিকদের জন্যই বিশেষভাবে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম কার্যকর করা হয়েছে। ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো ব্যক্তি পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের আওতায় অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। নাগরিকদের সুবিধার খাতিরে এই স্কিমের সর্বনিম্ন বিনিয়োগের অর্থ ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আপনি ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজারের গুণিতকে যেকোনো অংকের অর্থ এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী একই সাথে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকর আইন অনুসারে এই স্কিমের আওতায় একজন ব্যক্তি ৮.২ শতাংশ হারে সুদ পেয়ে থাকেন। নাগরিকদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, বাজেট অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্যে বলা হয়েছে, সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিমের আওতায় একজন ব্যক্তি সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। সুতরাং সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনি এই স্কিমের অধীনে বিনিয়োগ করতে পারবেন।