মাধ্যমিকের রেজাল্ট প্রকাশের পর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একদিকে যেমন নতুন শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার আনন্দ, উত্তেজনা কাজ করে, অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের আর্থিকভাবে অসচ্ছল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আগামী দিনে কিভাবে পড়াশোনার খরচ সামলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া সম্ভব তা নিয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা চলতে থাকে। আর সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর দরিদ্র অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন প্রকার স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে।
মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সেরা ৪ টি স্কলারশিপ:-
১. স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ:-
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে সমগ্র রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করার জন্য যেসকল স্কলারশিপগুলি কার্যকর করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য এবং বহুল জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ হলো স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ। জেনারেল ক্যাটেগরিভুক্ত ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং ওবিসি সাম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। অর্থাৎ এই স্কলারশিপের আওতায় সমস্ত কাস্টের ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন জানাতে পারবেন। মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা নয় স্নাতক স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার তুলনায় কম হতে হবে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানানো হয়েছে যে, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এছাড়াও যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পেয়ে থাকেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন না। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন ছাত্র-ছাত্রীরা স্কলারশিপের আওতায় ১২ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। তবে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রছাত্রীরা তাদের কোর্সের উপর নির্ভর করে ১২,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯৬,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসেই স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://svmcm.wbhed.gov.in/ -এর মাধ্যমে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- আবেদন করুন সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় এবং বছর শেষে হাতে পান বিপুল পরিমাণ অর্থ।
২. নবান্ন স্কলারশিপ বা উত্তরকন্যা স্কলারশিপ:-
রাজ্যের আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় -এর উদ্যোগে নবান্ন স্কলারশিপ বা উত্তরকন্যা স্কলারশিপটি কার্যকর করা হয়েছে। এই স্কলারশিপটি উত্তরবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে উত্তরকন্যা স্কলারশিপ নামে এবং দক্ষিণবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের কাছে নবান্ন স্কলারশিপ নামে বিশেষ পরিচিত। নবান্ন স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে মাধ্যমিকে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীরা নয় স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। স্নাতক স্তরে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা বিগত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫৩ শতাংশ নম্বর পেলেই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
তবে উভয় ক্ষেত্রের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারের বাৎসরিক আয় ১,২০,০০০ টাকা বা তার তুলনায় কম হতে হবে, তবেই স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় অনুদানের টাকা পাওয়া যাবে। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছর ১০,০০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ছাত্র ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন এবং অন্য কোনো স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পেলে এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদানের জন্য আবেদন জানানো যাবে না। নবান্ন স্কলারশিপের অধীনে আবেদনের জন্য অফলাইন এবং অনলাইন দুটি রাস্তাই খোলা রয়েছে। এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে নবান্ন স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wbcmo.gov.in -এ যেতে হবে। পরবর্তীতে আপনাকে নবান্ন স্কলারশিপ কিংবা উত্তরকন্যা স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের ফর্ম ডাউনলোড করতে সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে ইমেলের মাধ্যমে জমা দিতে হবে অথবা নির্দিষ্ট অফিসের ড্রপ বক্সে জমা দিতে হবে। সারা বছরের যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৩. ওয়েসিস স্কলারশিপ:-
পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সমস্ত কার্যকর করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপ হলো ওয়েসিস স্কলারশিপ। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন। যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা বিগত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তারা স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এর পাশাপাশি আরও জানিয়ে রাখি যে, ওয়েসি স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী পরিবারের বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ টাকা বা তার চেয়ে কম হতে হবে। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিজেদের ক্যাটাগরি অনুসারে ছাত্র-ছাত্রীরা পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ ফর SC/ST স্টুডেন্টস এবং পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ ফর OBC স্টুডেন্টস -এর আওতায় নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্সের উপর নির্ভর করে এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান পাওয়া সম্ভব। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসেই ওয়েসিস স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://oasis.gov.in/ -এর মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারবেন।
৪. ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ:-
মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কার্যকরী অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি স্কলারশিপ হল ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ। পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, মুসলিম, শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ টাকা বা তার চেয়ে কম হতে হবে। পোস্ট মেট্রিক ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অধীনে একাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা ১০,২০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। তবে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছেন তাদের ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ খানিকটা বেশি হয়। একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছেন তাদের ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের আওতায় ১১,৯০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা বিগত পরীক্ষায় নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে তারাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, শুধুমাত্র একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা নয় প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে পিএইচডি স্তরের ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদনের ক্ষেত্রেও একইভাবে বিগত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। অন্যদিকে এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্সের উপর নির্ভর করে ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের আওতায় ৩৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা ঐক্যশ্রী স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট wbmdfcscholarship.org -এর মাধ্যমে বাড়িতে বসেই স্কলারশিপের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।