সপ্তমীর ভোরে দুর্গাপুজোর আনন্দ মুহূর্তেই মিশে গেল চোখের জলে। বীরভূমের সিয়ান হাসপাতালের কাছে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। সোমবার সকালে কীর্ণাহার থেকে বোলপুরে যাচ্ছিল একটি যাত্রীবাহী বাস। যাত্রাপথেই সামনে থাকা একটি টোটোকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় বাসচালক। খারাপ রাস্তায় বড়সড় গর্তে চাকা পড়তেই মুহূর্তের মধ্যে বাসটি উল্টে ধানজমিতে পড়ে যায়।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাত্র সাত বছরের এক শিশুর। আহত হন অন্তত ৩০ জন যাত্রী। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রথমে সকলে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহতকে স্থানান্তরিত করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। দুর্ঘটনার পর গ্রামবাসীরাই প্রথমে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁদের তৎপরতায় বহুজনকে সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, বাসটি অত্যন্ত দ্রুত এবং বেপরোয়া গতিতে চলছিল। আচমকা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টোটোকে পাশ কাটাতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তার বেহাল অবস্থার সঙ্গে গাড়ির অতিরিক্ত গতি মিলে বড়সড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পুজোর মরসুমে এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। মাত্র কয়েকদিন আগেই নদিয়ার তেহট্টে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কলকাতা থেকে ঠাকুর দেখে ফেরার পথে গাড়িটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি ধাক্কা মারে গাছে। ঘটনায় মৃতের স্ত্রী-সহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। আরও আগে দুর্ঘটনা ঘটেছিল হুগলির চন্দননগরে। ঠাকুর আনতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনজন।
টানা দুর্ঘটনার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। উৎসবের আনন্দের মাঝেই একের পর এক প্রাণহানির খবর আঘাত করছে গোটা রাজ্যে। বিশেষত রাস্তার দুরাবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগের অভাব এই সড়কগুলিকে মরণফাঁদে পরিণত করছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সপ্তমীর ভোরে বোলপুরের এই দুর্ঘটনা সেই অভিযোগের আরও এক বেদনাদায়ক প্রমাণ। যেসব পরিবার ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন আনন্দ ভাগ করে নিতে, তাদের অনেকেই আজ শোকের ঘেরাটোপে। দুর্গাপুজোর দিনে সন্তান হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন এক পরিবার। অন্যদিকে হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন একাধিক মানুষ। উৎসবের আলো ঢেকে গিয়েছে নিরাপত্তাহীনতার কালো ছায়ায়।