অসমের রাজনীতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা যেন নতুন এক ঝড়ের আভাস এনে দিল। রাজ্যের রাজনীতিতে বহু দশক ধরে পরিচিত এক মুখ আচমকাই দল ছাড়ার ঘোষণা করলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে বিজেপি (BJP) শিবিরে নেমে এসেছে প্রবল আলোড়ন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ঘটনাই আগামী দিনে রাজ্যে দলীয় সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
রাজ্য বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতা রাজেন গোহেন—প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী ও চারবারের সাংসদ। প্রায় তিন দশক ধরে সংগঠনের দায়িত্ব সামলানো গোহেনের পাশাপাশি আরও ১৭ জন নেতা-কর্মীর একযোগে পদত্যাগ বিজেপির জন্য নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নগাঁও আসনে প্রার্থী না হওয়া থেকেই দলীয় অন্দরে তাঁর ক্ষোভের শুরু। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ফের টিকিট না মেলায় তাঁর ক্ষোভ এ বার বিস্ফোরিত রূপ নিল।
পদত্যাগের মঞ্চে গোহেন স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আজকের বিজেপি আর আগের মতো নেই।” তাঁর বক্তব্য, অটল বিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদভানির আদর্শে চলা যে সংগঠন তিনি একসময় চিনতেন, তা এখন সম্পূর্ণ রূপে বদলে গেছে। বর্তমান নেতৃত্বের ওপর অভিযোগ তুলেছেন—দল নাকি বহিরাগতদের প্রাধান্য দিচ্ছে, আর যাঁরা মূল থেকে সংগঠন গড়ে তুলেছেন, তাঁদের আর মূল্য নেই।
পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গোহেন আরও দাবি করেন, বিজেপি অসমবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে বহিরাগতদের বসবাসের অনুমতি দিয়ে সরকার আদিবাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। পাশাপাশি অভিযোগ তোলেন—সাম্প্রদায়িক বিভাজন বাড়িয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে, যা বিজেপির মূল আদর্শের পরিপন্থী।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় রাজ্য বিজেপির অন্দরে বর্ষীয়ান ও নবাগত গোষ্ঠীর সংঘাত আরও প্রকট হয়ে উঠল। তবে এই বিদায়ে রাজনীতির জমি যে নড়েচড়ে বসেছে, সে কথা বলতেই হচ্ছে। এছাড়াও রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এখন জোর জল্পনা—গোহেনের এই পদক্ষেপ কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নাকি নতুন জোট রাজনীতির ইঙ্গিত? তবে অনেকেই মনে করছেন, আদি বনাম নব্য শিবিরের এই সংঘাত ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বে দলের ভিত কাঁপিয়ে দিতে পারে। এই সঙ্কেতেই যেন আজ অসম বিজেপির আকাশে বাজ পড়েছে।